ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বীকৃতি চায় চাঁদপুরের দুই মুক্তিযোদ্ধা

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:০১

প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বীকৃতি চায় চাঁদপুরের দুই মুক্তিযোদ্ধা

দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর অতিবাহীত হলেও অজ্ঞাত কারনে আজও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেনি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দুই মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাষ্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটোয়ারির। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন শুধু রাষ্ট্রীয় ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায় ওই দুই মুক্তিযুদ্ধা।

পাক হানাদার বাহিনীদের দমন করার লক্ষে অস্ত্র গুদাম পাহাড়া দিয়েও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় চাপা ক্ষোভ মুক্তিযোদ্ধাসহ তাদের পরিবারের মাঝে। মৃত্যুর পূর্বে যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি তাদের।

জানা যায়, হাইমচর উপজেলার পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাষ্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গুদাম পাহাড়াসহ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা। অথচ বিএলএফের এই দুই সদস্যের অদৃশ্য কারনে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেনি। দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কোন সনদের জন্য নয়। তবুও জীবনের শেষ সময়ে এসে বেঁচে থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান প্রকৃত এই মুক্তিযোদ্ধারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাইমচর উপজেলার তৎকালীন পশ্চিমচর কৃষ্ণপুর গ্রামের আবুল খায়ের মাষ্টার, মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী, গোলাম রাব্বানী, বশির উল্লাহ বেপারী এবং আঃ রাজ্জাকসহ মোট ৫জন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গুদামপাহাড়া দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে প্রথমে উপজেলার গন্ডামারা গ্রাম থেকে আলগী বাজারের উত্তর পার্শ্বে সোনা মিয়া সরদার বাড়ি ও সর্বশেষ অস্ত্র গুদাম হিসেবে ব্যবহ্নিত অমর চান মাষ্টারের বাড়ির বসতঘর রাত দিন পালাক্রমে পাহাড়া দিতেন তারা। সেই অস্ত্র গুদাম ঘরের চার কোনায় ৪ জন পালাক্রমে পাহাড়া দিয়েছেন।

সে সময় বাগরা বাজারের উত্তর পার্শ্বে ডাকাতিয়া নদীতে পাক হানাদার বাহিনী অস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় তৎকালীন চাঁদপুর দক্ষিণ অঞ্চল কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুর, সহকারী কমান্ডার আবুল হোসেন ঢালীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে অক্টোবরের শেষের দিকে আক্রমন করে এবং পাক সেনাদেরকে পরাজিত করেন। আর সেই যুদ্ধে অংশ নেন এই দুই বিএলএফ সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধারা। তখন তারা পাক সেনাদের অস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী জব্দ করেন। যা পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তিকে আরো তরান্বিত করেছিলো।

খবর নিয়ে আরও জানা যায়, দেশ স্বাধীন হলে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী বাংলাদেশ বিমানে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এবং আবুল খায়ের মাষ্টার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ ফজলুল হক মনি স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের স্বীকৃতির সনদ প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে আবুল খায়ের মাষ্টার বাংলাদেশ মুক্তি ফ্রন্ট চাঁদপুর থানা শাখা কর্তৃক মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সনদ প্রাপ্ত হন।

এই দুই মুক্তিযোদ্ধার সহযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী ও বশির উল্লাহ বেপারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে তালিকা ভুক্ত হন। অপর সহযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেয়ে মনোকষ্টে হৃদরুগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন।

এদিকে ২০১৭ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই শুরু করলে এই দুই মুক্তিযোদ্ধা প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যাচাই বাচাই কমিটির নিকট জমা দেন। তাদের নামসহ হাইমচর থেকে ৩০ জনের একটি নামের তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই বাচাই তালিকাতে আবুল খায়ের মাষ্টারের নাম ১১ নম্বর এবং মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারীর নাম ১২ নম্বরে স্থান পায়। তবে ওই তালিকা কি অবস্থায় রয়েছে তার কোন খবর নেই।

শুনা যাচ্ছে আবারও এই তালিকা হতে নতুন করে যাচাই বাচাই করা হবে। এতে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার দাবি, মুক্তিযুদ্ধকালীন কামন্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুর দেশে থাকলে রাজ স্বাক্ষী হতেন। আমরা যেই বাড়িতে অস্ত্র গুদাম পাহাড়া দিয়েছিলাম, সেই বাড়ি গুলোর মধ্যে অমর চান মাস্টার এখনও জীবিত রয়েছেন।

সোমবার এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমর চান মাস্টার বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, মোহাম্মদ আলী পাটোয়ারি ও আবুল খায়ের মাষ্টার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তারাসহ পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধা আমার ঘরে অস্ত্র রেখে পালাক্রমে পাহাড়া দিয়েছেন। আমার দুঃখ হয় অনেক ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ এই পাঁচ জনের মধ্যে বেঁচে থাকা এ দুই জন আজও স্বীকৃিত পাননি।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করলাম। অস্ত্র গুদাম পাহাড়া দিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলাম না। শেষ বয়সে এসে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি, তিনি যেনো আমাকে মৃত্যুর পূর্বে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেন।

অপর ব্যক্তি আবুল খায়ের মাষ্টার বলেন, আমার সহযোদ্ধা পাঁচ জনের দুই জন মুক্তিযোদ্ধা দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার একটাই চাওয়া। তার হাত ধরেই যেন আমাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত