ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

চলতি বছরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা: শ্রিংলা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২০, ১৩:০৭  
আপডেট :
 ০২ মার্চ ২০২০, ১৭:৫৫

চলতি বছরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা: শ্রিংলা

চলতি বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ: ভারত: একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভবিষ্যৎ’-শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর চূড়ান্ত করতে ঢাকায় এসেছেন শ্রিংলা। সকাল ৯টার দিকে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

আরো পড়ুন: মোদির সফর চূড়ান্ত করতে ঢাকায় শ্রিংলা

আজ সকালে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসেন ভারতের এই পররাষ্ট্র সচিব। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এসময় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বক্তব্য দেন- প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাকি সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল শেখ মাসুদ আহমেদ, বিস চেয়ারম্যান এম ফজলুল করিম , ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ প্রমুখ।

আরো পড়ুন: ‘মমতাদিদি, বাংলাকে মোদির হাতে তুলে দিন’​

সেমিনারে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরই আগ্রহ রয়েছে। এটা নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। এই বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘আসামে যে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) হালনাগাদ করা হয়েছে, সেই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরিই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও মন্তব্য করেছেন দেশটির এই পররাষ্ট্র সচিব। এসময় তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বারবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আশ্বস্ত করেছেন যে, এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণের উপর এর কোনো প্রভাব থাকবে না। আমরা এই ব্যাপারে আপনাদের আশ্বস্ত করছি।’

সেমিনারে শ্রিংলা বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে এবং অনেকগুলো অভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারা থাকায় এটাও অস্বীকার করা যায় না যে, আমাদের দুই দেশেরই কিছু ঘটনা কারণে বা অকারণে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো আসামে নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদকরণ, যে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় আসতে পারা আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারণ, ঢাকা আমার কাছে নিজের শহরের মতোই। ঢাকা ও বাংলাদেশের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমি হাই কমিশনার হিসেবে এখানে কাজ করেছি এবং আমার কর্মজীবনের অন্যতম সন্তুষ্টিদায়ক পোস্টিং ছিল এটি। এখানে আসার আগেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিষয়ে কাজ করার সময়ে অনেকবার আমি এই সুন্দর দেশে এসেছিলাম। সুতরাং পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।’

মুজিববর্ষ উদযাপনে বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ মার্চ ঢাকায় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে মোদির। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

শ্রিংলা বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই মাসে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা এই সফরের প্রত্যাশায় রয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্কের প্রতি অগ্রাধিকার দেন এবং এর চেয়েও বড় কারণ, বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বনন্দিত নেতা এবং বাংলাদেশ ও আমাদের উপমহাদেশের মুক্তির প্রতীক। ভারতে তার নাম বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি বাংলাদেশে যেমন সম্মান লাভ করেন তেমনি ভারতেও তিনি সমান শ্রদ্ধার পাত্র। সুতরাং আমি এই জ্ঞানী, নির্ভীক, দৃঢ়প্রত্যয়ী এবং সর্বোপরি এমন একজন বীর যিনি শোষণের হাত থেকে একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই মহান বঙ্গসন্তানের জন্মশতবর্ষে আপনাদের শুভকামনা জানাই।’

সেমিনারে গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে খুব গুরুত্বসহকারে দেখে। এখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সবধরনের সহযোগিতা করছে সরকার। আর এটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

সেমিনারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গওহর রিজভীও দ্রুততম সময়ে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের তাগিদ দেন।

এনআরসি ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বিষয়টি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছেন। আর বাংলাদেশের মানুষের ওপর এটার প্রভাব পড়বে না বলেও আশস্ত করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক এই উপদেষ্টা।

গওহর রিজভী বলেন, আমরা তাদের আশ্বাসে আস্থা রাখছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষ যেন আশস্ত থাকতে পারে সে বিষয়ে ভারতকেই কথা রাখতে হবে।

এর আগে শ্রিংলা ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেলেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। তিনি গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকার দায়িত্ব পালন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেন। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন শ্রিংলা।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) শ্রিংলা ঢাকা ত্যাগ করবেন। ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি নিয়ে দুইটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি একই দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনেরও সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত