ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

লবণ চাষিদের ভর্তুকি দেবে সরকার: শিল্পমন্ত্রী

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২০, ১৯:৫২  
আপডেট :
 ০৬ মার্চ ২০২০, ১৯:৫৫

লবণ চাষিদের ভর্তুকি দেবে সরকার: শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি বলেছেন, প্রয়োজন হলে সরকার লবণ চাষিদের রক্ষার জন্য ভর্তুকি দেবে। যদি আমরা সারে ভর্তুকি দিতে পারি, লবণেও দিতে পারব। লবণ চাষিদের বাঁচাতে হবে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেব, আর আমার প্রান্তিক চাষিরা মরে যাবে, তা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লবণ চাষিদের জন্য চিন্তা করেন।

শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে অনুষ্ঠিত লবণ চাষি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের লবণ চাষিরা অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে উপস্থিত লবণ চাষিদের উদ্দেশ্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে মন্ত্রণালয় থেকে যারা লবণ চাষি, লবণ চাষের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। আপনাদের দাবিগুলো আমাদেরও দাবি, সরকারের দাবি। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আজকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিসিককে নির্দেশ দিয়েছেন, লবণ চাষিদের বাঁচাতে হবে। এটার জন্য যা যা করণীয় তা যেন করা হয়। কাজেই আমার মনে হয় না যে আপনাদের দাবি-দাওয়ার আর কোন প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম চীন থেকে, ভারত থেকে সোডিয়াম আমদানি করে বাজার সয়লাব করা হচ্ছে। এটাকে প্রোটেক্ট করতে হবে। লবণ আমাদের একটা বিশাল শিল্প। এটাকে আমরা শেষ করে দিতে পারি না। আজকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ছোট ব্যবসায়ীদের গিলে খাচ্ছে। এটাকে প্রটেক্ট করার জন্য উপায়গুলো আমরা বের করছি।

লবণ চাষিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, এখানে মূল অর্থনীতি আবর্তিত হয় লবণ শিল্পকে নিয়ে। এটা সরকার এবং শিল্প মন্ত্রণালয় অবহিত আছে। লবণ চাষিদের দাবি-দাওয়াগুলোর স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা কাজ করবো। আপনারা লবণ বোর্ডের দাবি করেছেন। যদি প্রয়োজন হয় আমরা লবণ বোর্ড করবো। আমরা অবশ্য এর প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই করে দেখবো।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমিও কিন্তু আপনাদের লবণ শিল্পের একজন চাষি। ১৯৮৬ সালে এরশাদের সময়ে আমি যখন তরুণ এমপি ছিলাম, তখন লবণ চাষিদের নিয়ে কাজ করতে এখানে এসেছি। আমি তখন সংসদীয় কমিটিতে ছিলাম। চকরিয়াতে আমর লবণ চাষের জমি আছে। আমি চাষি। কাজেই আপনাদের স্বার্থ আমি দেখবো।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, শফিক মিয়া, জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান প্রমুখ।

এ সময় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, এ দেশের কিছু সিন্ডিকেট সোডিয়াম সালফারের নাম দিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে লবণ চাষিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আমাদের দাবি হচ্ছে- প্রয়োজনের বেশি সোডিয়াম সালফেট যেন দেশে ঢুকতে না পারে। সেজন্য শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি টাস্কফোর্স গঠন করে চাহিদা নিরুপন করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সোডিয়াম সালফার যানে আনতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, লবণ আমদানির ওপর সুনির্দিষ্ট হারে কর আরোপ করে মাঠ পর্যায়ে যাতে লবণের ১০ টাকা মূল্য থাকে, সেভাবেই যাতে আমদানি খরচ হয়, সেই পর্যায়ে একটি কর নিরূপণ করা দরকার। এর জন্য বিসিক থেকে যে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটির সাথে সঙ্গতি রেখে আপনারা যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাহলে প্রতি বছর লবণের নায্যমূল্য পাওয়ার জন্য চাষিদের আর হতাশায় নিমজ্জিত হতে হবে না।

সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ৪ টাকা দরে লবণ কিনে ৪২ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি করে। এত টাকা কাদের পকেটে যায়? তাদের চিহ্নিত করতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কথা না শুনে সাধারণ চাষিদের কথা শুনতে হবে আমাদের। লবণ আমদানির কোন প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, এক মাসে একটি পরিবারের জন্য মাত্র ৭ থেকে ৮ কেজি লবণে দরকার হয়। এই লবণ যদি ২০/২৫ টাকায় বিক্রি করা হয় তাতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে না। লবণের মণ প্রতি মূল্য ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলে চাষিরা বাঁচবে। আবার প্রতি কেজি লবণ খুচরা বাজারে যেনো ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে থাকে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে লবণ চাষীদের কল্যাণে গৃহিত নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোশ্তাক হাসান বলেন, ইতোমধ্যে বিসিকে লবণ বিভাগ করা হয়েছে। সেখানে একজন ডিরেক্টর জয়েন্ট সেক্রেটারি থাকবেন এবং তাদের অধীনে ২০০ জন লোক কাজ করবে লবণ চাষিদের উন্নয়নের জন্য।

তিনি বলেন, লবণ চাষের আধুনিক পদ্ধতি, পলিথিন পদ্ধতিতে আরও বেশি ফলন দেওয়ার জন্য আমরা গবেষণা করছি। এর ফলাফল আমরা জানিয়ে দেব। আমরা কৃষক ভাইদেরকে ঋণ দেওয়ার জন্য কার্যক্রম গ্রহন করেছি। আমরা বিসিকের তরফ থেকেও চেষ্টা করছি চাষিরা যাতে ঋণ পায়। লবণ চাষি ভাইদের সাথে সারক্ষণ আমরা আছি। লবণ চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি যেন মিলাররা লবণ কিনতে পারে, এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। কাজেই লবণ চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নাই।

তিনি আরও বলেন, গত বছর এখানে লবণের বাম্পার লবণ ফলন হয়েছে। শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশের কারণেই কিন্তু গত বছর কোন লবণ বাইরে থেকে আমদানি হয়নি। আপনারা নায্যমূল্য পেয়েছিলেন। এ বছরও নায্যমূল্য পাওয়ার জন্য যা করা দরকার, আমরা বিসিকের তরফ থেকে করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত