ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি!

  শওকত জামান, জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২০, ১৯:২৭

উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি!

জামালপুরের মেলান্দহে মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলা দখলে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান বসবাস করছেন। এক পাশে তিনি থাকেন, অপর পাশে থাকেন তার ব্যক্তিগত কেয়ারটেকার খোকন ও কাজের মহিলা। বারান্দায় রশিতে ধোয়া কাপড় ঝুলছে। তার দখলে থাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমসহ গর্ভবতী মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা। চেয়ারম্যানের দখলমুক্ত হয়ে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন পরিবার ও পরিকল্পনা কার্যক্রম ও প্রজনন স্বাস্ব্যসেবা বঞ্চিতরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের পাশে মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের মহিরামকুল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। নিচ তলায় গিয়ে দেখা যায়, দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার তার রুমে নেই, তিনি মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছেন।

সেখানে দায়িত্বরত ফার্মাসিস্ট সালেহা খাতুন, সাব উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার রাবেয়া খাতুন ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, দুই মাস আগে মেডিকেল অফিসার তানজিনা তারান্নুম যোগদানের পর মাত্র দুই দিন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছিলেন। আসেন না অফিস সহায়ক মোহাইমিনও।

ফার্মাসিষ্ট ও সাব-উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ভরসায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা। দ্বিতীয় তলা উঠতে গিয়েই দেখা যায় তালা ঝুলছে। ডাকাডাকির পর বিধি নিষেদের ফরমান জারি করলো উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কেয়ার টেকার খোকন। চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধি শওকত জামানকে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব প্রায় এক বছর যাবৎ এখানে বসবাস করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস করে বিকেলে আসেন। এখানেই রাত যাপন করেন। তার অনুমতি ছাড়া আমি আপনাদের ঢুকতে দিতে পারবো না। কোন প্রয়োজন থাকলে বিকালে আসেন, তখন চেয়ারম্যান সাহেব থাকবেন।

একটু এগিয়ে যেতেই দেখা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু গ্রামবাসীর সাথে। তারা বলেন, 'নির্বাচনে পার হবার পর থেকেই চেয়ারম্যান সাব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেই থাকেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে এই প্রতিনিধি মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক রুমে নেই। সিভিল সার্জন অফিসে মাসিক মিটিংয়ে রয়েছেন। তার রুমে সহকর্মীদের নিয়ে কথা বলছেন মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিনা তারান্নুম।

মহিরামকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্ব ফেলে এখানে কেনো- জানতে চাইলে তিনি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দুই দিন গিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হক স্যার মৌখিকভাবে ইমারজেন্সি ডিউটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে রেখেছেন।

কিন্তু অন্যদিকে দেখা যায়, তারা যখন গল্পরত তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে ও বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভিড়। অন্যান্য মেডিকেল অফিসার রোগীর ভিড় সামলিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. ফজলুল হকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জেলার বাইরের বাসিন্দা হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়াটারে থাকবেন। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাপ্তাহে দুই দিন ডিউটি করবেন, বাকি দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আউটডোর ও ইনডোরে রোগী দেখবেন। তিনি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান না, আমাকে জানায়নি। আমি নির্দেশ দিবো তিনি যেন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত ডিউটি করেন। তবে তিনি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যানের বসবাসের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।

উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুজ্জামান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি কই থাকমু তাইলে, উপজেলা চেয়ারম্যান কই থাকবো? ভিজিটর তাহমিনা বেগমের গেষ্ট আমি। একজনের বাড়িতে কি আরেকজন থাকতে পারে না? গেষ্ট হিসেবে থাকি আমি।‘

কতদিন গেষ্ট হিসেবে থাকেন- জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ধামকি দিয়ে বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে থাকি, এইডা সমস্যা কি? কার বাড়িতে কে থাকে, আমি কই থাকলাম, ঘাটাঘাটি কইরো না। সব জায়গা নিয়ে ঘাটাঘাটি কইরো না, ঘাটবার গেলে সমস্যা আছে।‘

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামীম আল ইয়ামিন বলেছেন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার কেন যায় না, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, তিনি পরিদর্শনে যান, এই বিষটি আমি জানি। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বসবাস করেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. সাজদা--জান্নাত বলেন, উপরের তলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভিজিটর তাহমিনার থাকার কথা। ভিজিটর প্রতি মাসে ৫’শ টাকা ভাড়াও প্রদান করেন। তিনি যেন সেখানে থাকেন, এই বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হবে। আমি চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো- তিনি যেন সে জায়গাটি ছেড়ে দিয়ে ভিজিটরের থাকার পরিবেশ তৈরি করে দেন।

এ প্রসঙ্গে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. গৌতম রায় বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে মোবাইলে নিশ্চিত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারকে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত যাওয়ার নির্দেশ দেন।

উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যানের থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিভাগের লোক ছাড়া অন্য কারও থাকার নিয়ম নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত