ফরিদপুরে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষ, চরম কষ্টে দিনাতিপাত

করোনার প্রভাবে ফরিদপুরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা।

প্রতিদিনের মত শহরের জনতা ব্যাংকের পাশের রোডে কাজের খোঁজে অপেক্ষা করছিলেন সালথার পিকুল মোল্লা। প্রায় দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কাজ পাওয়া গেলেও গত কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ মিলছেনা। তিনি বলেন, আমরা ১০০ থেকে ২০০ জন প্রতিদিন এখানে আসি কাজের সন্ধানে। গত কয়েকদিন ধরে আমরা বেকার সময় পার করছি। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত যাপন করছি।

শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

কাজের সন্ধানে আসা আসিক আলী (৪০) বলেন, আমরা বাসাবাড়ির মেরামত, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘাষ কাটা, মাটি ভরাটসহ যেকোনো কাজ করি। দৈনিক সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা দিয়ে কাজ করি। আবার অনেক সময় ৬০০ টাকা দিয়েও করি। আমার ছেলেরাও টমটম চালায়। ঘরে উপযুক্ত মেয়ে আছে। তারা সবাই লেখাপড়া করে। তাই অনেক খরচ। এখন কাজ না থাকায় আমরা খুব সমস্যার মধ্যে পড়েছি।

একইভাবে শহরের পুরোন বাসষ্টান্ড ও ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে শ্রম বাজারে কাজের সন্ধানে আসা আলমগীর বলেন, আমি রংয়ের কাজ করি তবে কয়েক দিন ধরে কাজ না থাকায় এখন অন্য কাজ ধরতে এখানে এসেছি। এখন বাজারেও দেখি কোন কাজ নেই। তাই মারাত্মক সমস্যায় পড়েছি। জানিনা কি করবো।

শহরের রিকশা চালক মজিবর মিয়া অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। আগের দিনে যেখানে ছয়-সাতশ টাকা রোজগার করতেন এখন তা তিন-চারশ টাকায় নেমে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘যদি সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় কী খাবো, সংসার কিভাবে চালাব ভাবতে পারছি না । কোনো জমানো টাকাও নেই যে তা দিয়ে চলব । আল্লাহর উপর সব ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি আরো বলে, সরকারি কর্মকর্তারা মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন পায়। দেশে যত দূর্যোগ আসুক উনাদের কোনো সমস্যা নেই। যত সমস্যা সব আমাদের মত গরীব মানুষের।

শ্রমজীবি মানুষের অর্থ সঙ্কট বিষয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সহিদুল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন সব কিছু লকডাউন। দেশ মন্দা অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। এতে অর্থনীতিও স্থবির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা করোনার চেয়েও ভয়াবহ। সাধারণ মানুষ তেমন ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। আবার যাদের বাসাবাড়িতে কাজ ছিল তারাও কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও বন্ধ। তাই শ্রমজীবি মানুষ সমস্যায় আছে এটা সত্য। আমার মতে জেলার অতি দরিদ্র মানুষের একটি তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা জরুরী।

এদিকে করোনার প্রভাবে শুধু শ্রমজীবি মানুষ নয় রিকশাচালক, টমটম চালক এমনকি ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরাও অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে শহরের বায়তুল আমান সড়কের টমটম চালক তুহিন বলেন, আগে এই টমটমের যাত্রী ছিল বেশ এখন মানুষ বিনাপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। তাই রাস্তায় ভাড়া কম। ফলে আগে দিনে কমপক্ষে ১০০০ টাকা ভাড়া পেলেও গত ২ দিন ধরে ৪০০ টাকাও পাচ্ছিনা। এতে গাড়ী ভাড়াও দিতে পারছিনা। এখন বাড়িতে নিয়ে যাব কি? খাব কি?। আর আমাদের বাড়িতে এমন কোন টাকাও জমা নেই, কাজ ছাড়া চলতে পারবো।

এদিকে কমলাপুর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, আমি শহরের একটি হোটেলে চাকরি করতাম। তবে কয়েক দিন আগে লোকজন আসা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের হোটেলও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। পুরো মাসের বেতনও দেয়নি। তাই এখন ঘরে বসে আছি। আমরা গরীব মানুষ কিছু না করলে খাব কিভাবে। এখন দেখছি ছোটখাট কাজও মিলছেনা। জানিনা এখন কি করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর