ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনাভাইরাস: মহাসংকটে পোশাক খাত

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২০, ২০:৩৪

করোনাভাইরাস: মহাসংকটে পোশাক খাত
ফাইল ছবি

করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা তৈরি পোশাক শিল্প মহা বিপর্যয়ের মুখে। চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পোশাক কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ কর্মকর্তারা।

এতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যই শুধু চরম ক্ষতির মুখে পড়বেনা, প্রায় অর্ধকোটি পোশাক শ্রমিকেরও পথে বসার উপক্রম হয়েছে। পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, ‘তাদের একমাসের বেতন দেয়ার ক্ষমতাই আমাদের নেই। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা তাদের বেতন দেব কিভাবে?’

আরো পড়ুন: করোনাভাইরাস: বিভ্রান্তিকর তথ্য যেভাবে ছড়ায়

তবে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, ‘আমরা শ্রমিকদের সব ধরনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতারা অবিবেচকের মত অর্ডার বাতিল করায় পরিস্থিতি মহাসংকটের দিকে যাচ্ছে। তারপরও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেকেনো পরিস্থিতিতে আমরা শ্রমিদের বেতন দেব। তারা বেতন পাবেন।’

আরো পড়ুন: নিউমার্কেটসহ ডিএসসিসির সব মার্কেট বন্ধ

এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রাহমান জানান, ‘প্রতিদিন একটি দু’টি করে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। যা পরিস্থিতি তাতে সব কারখানাই বন্ধ হয়ে যাবে। আগামী জুন পর্যন্ত আমাদের যা অর্ডার আছে তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। যারা আমাদের পোশাক কেনেন ইউরোপ, অ্যামেরিকা তারাও করোনায় আক্রান্ত। কে আমাদের পোশাক নেবে?’

আরো পড়ুন: করোনাভাইরাস: ফোন নিরাপদ করার উপায়

অর্ডার বাতিলের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বিজিএমইএর মনিটিরিং সেলের সোমবারের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। অর্ডার বাতিল হওয়া কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৮৯টি। আর এসব কারখানায় ১২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিনই অবস্থার অবনতি ঘটছে। গড়ে প্রদিনই ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের অর্ডার বাতিল হচ্ছে।

আরো পড়ুন: হংকংয়ে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ

সোমবার সাভারের দুটি পোশাক কারখানা করোনার কারণে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারখানা দু’টি হলো সাভারের হেমায়েতপুরের দীপ্ত অ্যাপারেলস ও ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড।

আরো পড়ুন: করোনায় গৃহবন্দি ৮ কোটি মানুষ ৬ মাস ফ্রি চাল পাবেন​

আর রোববার কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে শতাধিক পোশাক কারখানা আছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পোশাক কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত বিজিএমইএ নেবে।

আরো পড়ুন: আইসোলেশন কোয়ারেন্টাইন কী, কখন দরকার?

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক সংকটের কারণে গত ১৪ মাসে ১০৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছরের ১৮ মার্চ তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের ১৯ মার্চ কমেছে ১২ দশমিক ০২ শতাংশ।

আরো পড়ুন: লকডাউন না মানলে কড়া ব্যবস্থা

এ বছরের ২০ মার্চ কমেছে ৪৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে আর কত অর্ডার বাতিল হচ্ছে তার শতাংশ হিসাব করার সুযোগ নেই। সব অর্ডারই বাতিল হচ্ছে। সব কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। সময়ের ব্যাপার মাত্র। করোনা এখন বিশ্ব মহামারি। আর বাংলাদেশের পোষাক খাত এখন মহাসংকটে।’

আরো পড়ুন: হাতে ‘হোম কোয়ারেন্টিন’ সিল দেখলেই গ্রেপ্তার

রুবানা হক বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতারা মানবাধিকারের কথা বলেন। কমপ্লায়েন্সের কথা বলেন। কিন্তু তারা এখন অবিবেচকের মত সব অর্ডার বাতিল করছেন। বন্দরে পোশাক গিয়ে পৌছার পর, মাঝপথে থাকা চালান সবই তারা বাতিল করছেন। এটা হতে পারে না। করোনা সংকট সারবিশ্বে। তাই একসঙ্গে সংকট মোকাবিলা করতে হবে। তাই আমার আহ্বান সারা বিশ্বের ক্রেতাদের প্রতি, ব্র্যান্ডের প্রতি। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রেখে অর্ডার বাতিল করবেন না। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। এর সঙ্গে ৪১ লাখ শ্রমিকের জীবন জড়িত। আপনারা বিবেক বর্জিত কাজ করতে পারেন না।’

আরো পড়ুন: করোনাভাইরাস: ইতালির পাশে রাশিয়া

বাংলাদেশে মোট পোশাক কারখানা সাড়ে চার হাজারের মত। সেখানে কাজ করেন ৪১ লাখ পোশাক শ্রমিক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। যা মোট রপ্তানির ৮০ ভাগেরও বেশি।

সাধারণ ছুটি ঘোষণা, নামছে সেনাবাহিনী

করোনার জন্য বাংলাদেশে ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরফলে কার্যত ২৬ মার্চ থেকেই বন্ধের আওয়তায় চলে যাচ্ছে সবকিছু। আর মঙ্গলবার থেকে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সারাদেশে সেনাবাহিনী নামছে।

আরো পড়ুন: হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের ফল পাঠানো হচ্ছে

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা সোমবার ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন, দেশে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জন। মারা গেছেন মোট তিন জন। আইসোলেশনে আছেন ৫১ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৬ জন। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত