ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা নয়, কিস্তি নিয়ে চিন্তিত নিম্ন আয়ের মানুষ

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২০, ২১:০৯

করোনা নয়, কিস্তি নিয়ে চিন্তিত নিম্ন আয়ের মানুষ

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত সারা দেশের মানুষ। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর নিম্ন আয়ের মানুষ করোনাভাইরাস থেকেও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এনজিওর কিস্তির টাকা নিয়ে। কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য সকাল-সন্ধ্যা এসব খেটে খাওয়া মানুষদের বাড়ীতে এনজিও কর্মীরা হানা দিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফুলবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা অধিকাংশ মানুষ, শহরের রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। এতে বিপাকে পড়েছে শ্রমিক, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

পৌর শহরের রিকশাচালক দাদপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ খরকুদ্দিন মিয়া জানান, তার পরিবারে ৮জন সদস্য। তার প্রতি সপ্তাহে এনজিও’র কিস্তি দিতে হয় ১৪শ টাকা। বর্তমানে শহরের মানুষ কমে গেছে এখন আর তেমন আয় হচ্ছেনা। কিভাবে সংসার চলবে আর এনজিও কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবে, এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তিনি।

একই কথা বলেন একই এলাকার রিকশাচালক শহিদুল ইসলাম। তার বক্তব্য, তিনি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছেন। বর্তমানে তার আয় না থাকায় এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জয়নগর গ্রামের দিনমজুর শাহিনুর রহমান জানান, কোরোনা আতঙ্কে এখন কেউ তাকে বাড়ীতে কাজে দিচ্ছেনা। ফলে তার মজুরী বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মাঝে তাকে প্রতি সপ্তাহে তাকে ১১শ টাকা কিস্তি দিতে হয়। তিনি কিভাবে এই কিস্তি পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছে তিনি।

একই অবস্থা ক্ষুদ্র চা-ষ্টল ও পান-সিগারেটের দোকান ও ফলের দোকানগুলোতেও। শহরে জনসমাগম কমে যাওয়ায়, এই সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও খাবারে দোকান হোটেলের বেচা-কেনা কমে গেছে। এতে শ্রমিক ও দিন মজুরদের ন্যায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।

পৌর শহরের বটতলি মোড়ের চা বিক্রেতা দুলু মিয়া বলেন, সারাদিন যেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেচা-কেনা হত, সেখানে পাঁচশ টাকাও বেচা-কেনা হচ্ছেনা। একই কথা বলেন নিমতলা মোড়ের হোটেল ব্যবসায়ী সুলতান হোসেন, বর্তমানে বেচা-কেনা একেবারে কমে গেছে, এতে হোটেলের ভাড়া কর্মচারীদের বেতন দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, এর উপর রয়েছে ঋনের কিস্তি।

ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলনের নেতা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের কিস্তি স্থগিত করা হলেও, গরিবের এনজিওর কিস্তি স্থগীত করা হয়নি। তাই তিনি এনজিওর কিস্তি বন্ধ করার আহবান জানান।

কিস্তির বিষয়ে এসকেএফ ফাউন্ডেশনের ফুলবাড়ী শাখার ম্যানেজার গোলজার হোসেন বলেন, কিস্তি আদায় বন্ধে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি তাই আমরা যথারীতি মাঠে কাজ করছি।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী এনজিও ফোরামের সভাপতি এমএ কায়ুমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এনজিওগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে। এখন পর্যন্ত কিস্তি বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের চিঠি আসেনি তাই নিয়মিত কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। নির্দেশনা এলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেছেন, এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য ফুলবাড়ীতে কর্মরত এনজিওগুলোকে মৌখিক নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত কিস্তি নিচ্ছে এনজিওগুলো। এ জন্য কারোনা প্রাদুর্ভাব না কাটা পর্যন্ত এনজিওর কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য সরকারের উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত