ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেউ রইলো না তাদের

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২০, ১৩:৫৯

কেউ রইলো না তাদের

সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলো যমজ দুই অবুঝ শিশু। এখনও ঠিকভাবে হাঁটতে না শেখা দেড় বছরের শিশু দুটিকে দেখার জন্য বৃদ্ধ দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ রইলো না। শিশু দুটিকে নিয়ে দাদা-দাদি যেমন পড়েছেন বিপাকে, তেমনি তাদের ভবিষৎও এখন অন্ধকার। মা-বাবার খোঁজে কেঁদে কেঁদে শয্যাসায়ী শিশু দুটি।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল মতলিবের ছেলে রংমিস্ত্রী নোমান মিয়া (২৫)। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও যমজ দুই কন্যা শিশুকে নিয়ে ছোট একটি সংসার তার। অভাব অনটনের মধ্যেই দিনানিপাত করলেও সুখের অভাব ছিল না তার সংসারে। একটি ঝড় ভেঙে তছনচ হয়ে গেলো সাজানো সংসারটি।

গত ২০ মার্চ দুপুরে অসুস্থ স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে (২২) নিয়ে ডাক্তার দেখাতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে হবিগঞ্জ শহরের আসছিলেন নোমান মিয়া। পথিমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে উপজেলার নূরপুর এলাকায় পৌঁছলে একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের বহনকৃত সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন নোমান মিয়া।

গুরুতর আহত অবস্থায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে তিনিও মৃত্যুর কাছে হার মানেন।

এদিকে, মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে কোলের দুই যমজ শিশু। এখনও তারা জানে না তাদের মা বাবা আর কোনদিন ফিরবেন না। কোলে নিয়ে আর কোনদিন আদর করবে না তাদের। সারা দিন-রাত কেঁদে কেঁদে শিশু দুটি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এখন শিশু দুটি দেখার জন্য একমাত্র বৃদ্ধ দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ রইল না। কিন্তু দাদা-দাদি নিজেরাই ঠিকভাবে চলতে পারেন না, আবার আর্থিক অবস্থাও একেবারেই খারাপ। ফলে শিশু দুটিকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।

শিশু দুটির দাদা আব্দুল মতলিব বলেন, আমরা দুইজন বৃদ্ধ মানুষ। আমরা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল রাখতে পারি না। এই অবুঝ দুটি শিশুর কি করে দেখা-শুনা করব? তাছাড়া আমাদের টাকা পয়সাও নেই।

তিনি বলেন, শিশু দুটি কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে গেছে। দিনরাত তারা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মা-বাবাকে খোঁজে।

নূরপুর ইউনিয়নরে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, শিশু দুটির দিকে তাকানো যায় না। এখনও তারা কিছুই বুঝতে শিখেনি। এর মধ্যে মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেলো। তাদের দেখা-শোনার জন্য একমাত্র দাদা-দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও একদম ভালো না। আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা সংগ্রহ করে পরিবারটিকে বাঁচিয়ে রাখার।

নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়া বলেন, আমরা ঘটনাটি নিয়ে খুবই মর্মাহত। পরিবারটিও অত্যন্ত অসহায় হওয়ায় সরকারি সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও কিছু সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিকে আটক করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার বাসের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেনি। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেছিলেন শিশু দুটির ভবিষতের কথা বিবেচনা করে বাস মালিকের সাথে আলোচনা করে কিছু একটা করার জন্য। দু’এক দিনের মধ্যে বাস মালিকের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে নিয়ে বসা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত