ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

জ্বর-কাশিতে সারাদেশে ৬ জনের মৃত্যু

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২০, ২২:৪৩

জ্বর-কাশিতে সারাদেশে ৬ জনের মৃত্যু

পিরোজপুরে জ্বর-কাশিতে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে গ্রাম কোয়ারেন্টিনে, ঝালকাঠিতে ‘ইনজেকশনের পর আরও অসুস্থ, মারা গেলেন বৃদ্ধ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এক নারী, সিলেটে আইসোলেশনে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কিশোরী ও চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ায় শ্বাসকষ্ট, টাঙ্গাইলের মধুপুরে জ্বর সর্দিতে একযুবক ও জ্বর নিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যুসহ সারাদেশে মোট ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দৈনিক বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পিরোজপুর: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পুরো গ্রামটি কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার ভান্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব ধাওয়া গ্রামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর (১৭) মৃত্যুর পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় বলে জানান ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম।

ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি চারদিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। সকালে মোবাইল ফোনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে তাকে হাসাপাতালে আনতে বলা হয়। কিন্তু পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে হাসপাতালে না এনে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করেন। বাড়িতেই ছেলেটির মৃত্যু হয়। জহিরুল ইসলাম আরও জানান, মৃত ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর তাদের বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোকে লকডাউনিএবং দক্ষিণ-পূর্ব ধাওয়া গ্রামকে কোয়ারেন্টিন ঘোষণা করা হয়েছে।

মৃত শিক্ষার্থী (১৭) এ বছর দক্ষিণ ধাওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পিরোজপুরের সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান, জেলায় ৪৫৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।

ঝালকাঠি: ঝালকাঠিতে জ্বর হওয়ার পর এক ব্যক্তি মারা গেছেন, যাকে এখতিয়ার না থাকলেও ইনজেকশন দিয়েছিলেন এক ডিপ্লোমা চিকিৎসক। আব্দুল হালিম হাওলাদার (৬৫) নামে এই ব্যক্তি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জেলার রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে মারা যান। তার শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ পাননি রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবুল খায়ের রাসেল।

তিনি বলেন, আব্দুল হালিম কয়েক দিন আগে জ্বর হলে স্থানীয় সোহাগ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান। ক্লিনিকের ডিপ্লোমা চিকিৎসক নাসির উদ্দিন ওই ব্যক্তিকে ইনজেকশন দেওয়ার ব্যবস্থাপত্র দেন। তবে একজন ডিপ্লোমা চিকিৎসকের পক্ষে ইনজেকশর পুশ করার ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার এখতিয়ার নেই।

ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাস নয়, অন্য কোনো কারণে তিনি মারা গেছেন।

এ বিষয়ে মঠবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. তরিকুল ইসলাম তারেক সাংবাদিকদের বলেন, ডিপ্লোমা চিকিৎসক নাসির ১৪টি ইনজেকশন নিতে বলেন হালিমকে। হালিমকে মোট তিনটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডিপ্লোমা চিকিৎসক নাসির এখতিয়ারের বাইরে ইনজেকশন দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, হালিমের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল না। তবে তার রক্ত পরীক্ষা করলে টাইফয়েড ধরা পড়ে। সে কারণে আমি সেফট্রিয়াক্সন ইনজেকশনের ব্যবস্থাপত্র দিই।

ডিপ্লোমা চিকিৎসকের এ ধরনের ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। দুঃখিত। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর হবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ১১ দিন কৃষিকাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর মারা যান। তাঁর সঙ্গে কৃষিকাজে যাওয়া সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মারা যাওয়া ওই নারীর নাম মাংগো বারোয়ার (৫৫)। তিনি গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বসনইল প্যারাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওঁরাও সম্প্রদায়ের সদস্য।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, বাইরে থেকে জ্বর-কাশি নিয়ে এসে মাংগো মারা গেছেন। এ কারণে তিনি প্রশাসন ও পুলিশের কাছে খবর দেন। এরপর গোমস্তাপুর থানা-পুলিশ ও গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁরা মৃত নারীর আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই নারীর যক্ষ্মা রোগ ছিল। তাই তাঁকে সমাধিস্থ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গ্রামবাসী বিকেলে ওই নারীকে সমাধিস্থ করে।

কিন্তু মাংগো বারোয়ার যাঁদের সঙ্গে রাজশাহীর তানোরে কৃষিকাজে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়ে এসেছেন পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। এ কারণে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় মানুষের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকে ভয়ও পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, মাংগোর সঙ্গে যাঁরা কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা কোয়ারেন্টিন মানছেন কি না, তা তদারক করা দরকার। তাঁদের উপসর্গ দেখা দিলে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা দরকার।

গোমস্তাপুর থানার উপপরিদর্শক আইনুল হক বলেন, তাঁরা মাংগোর পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে পেরেছেন, ১১ দিন আগে রাজশাহীর তানোরের কালীগঞ্জ এলাকায় খেতের আলু তোলার কাজে গিয়েছিলেন মাংগো ও তাঁর মেয়েসহ ১১ জন নারী-পুরুষ। দুই দিন আগে মাংগো জ্বরে আক্রান্ত হন। গতকাল সোমবার সকালে তাঁরা এলাকায় ফিরে আসেন। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, মাংগোর যক্ষ্মা ছিল। শ্বাসকষ্টেও ভুগছিলেন বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময়। এ জন্য তাঁর সঙ্গে কাজে যাওয়া অন্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান বলেন, স্থানীয় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাংগো গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ৯ মার্চ শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নেন। করোনাভাইরাসে তাঁর মৃত্যু হয়নি বলেই আমরা মনে করি। তবু এখন সময়টা খারাপ। তাই মাংগোর সঙ্গে কাজে ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।

সিলেট: সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল। নিহত কিশোরীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়।

সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল জানান, দুপুরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই কিশোরী। তাকে করোনাভাইরাসের আইসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। বেলা ৩টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

কিশোরীর পারিবারের লোকজনকে উদ্ধৃত করে সিভিল সার্জন জানান, গত প্রায় এক মাস ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। মঙ্গলবারই তাকে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওই কিশোরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি-না তা পরীক্ষা করতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে; যাদের অনেকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ছিলেন কি-না জানার জন্য। বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে সোমবার ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই বৃদ্ধ মারা যেতে পারেন, এমন সন্দেহে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানান স্থানীয় লোকজন। তবে পরিবার ও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই ব্যক্তির হূদ‌রোগ ও শ্বাসকষ্ট ছিল। ওই বৃদ্ধর বাড়ি উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে হূদ‌রোগে ভুগছিলেন। কয়েক বছর ধরে তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। গতকাল বিকেলে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তবে তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতেই নেবুলাইজার দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানো হয়। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় ওই বৃদ্ধকে চট্টগ্রাম সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে নেওয়ার আগেই রাতে মারা যান। ওই ব্যক্তির পরিবারে বিদেশফেরত ব্যক্তি নেই। এমন কারও সংষ্পর্শে যাওয়ার কোনো ঘটনাও নেই। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সোমবার দিবাগত রাত দুইটার স্থানীয় এক ব্যক্তি মুঠোফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দেখতে বলেছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব পালিত বলেন, ওই রোগীর বিষয়ে আমরা খবর নিয়েছি। তাঁকে হাসপাতালে আনার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমরা পাইনি। যতটুকু জেনেছি, কয়েক বছর ধরে তাঁর হূদ‌রোগ ও শ্বাসকষ্ট ছিল। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না বলেই আমরা ধারণা করছি। বিষয়টি চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানানো হয়েছে।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত