ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

করোনার লক্ষণ নিয়ে দুই শিশুসহ আরো ৯ মৃত্যু

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২১

করোনার লক্ষণ নিয়ে দুই শিশুসহ আরো ৯ মৃত্যু

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দুই শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বাড়ি লকডাউন করার পাশাপাশি ওই সব রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নালের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য নিচে তুলে ধরা হল-

লক্ষ্মীপুর- কমলনগরে জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ওই পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের মার্টিন গ্রামের চার বছর বয়সী এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর আগে শুক্রবার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে দুই বছর চার মাস বয়সী আরেক শিশু মারা যায়। মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

শিশুমৃত্যুর খবর শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠায়। এছাড়া তোরাবগঞ্জে খিঁচুনি রোগে মারা যাওয়া শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করে চিকিৎসকরা ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, তোরাবগঞ্জে মারা যাওয়া শিশুটির নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি ওই বাড়ির তিন পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।

চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী মিয়া জানান, মারা যাওয়া শিশুটির বাবা প্রবাসী হলেও গত দুই বছরে তিনি বাড়ি ফেরেননি। সতর্কতার অংশ হিসেবে ওই বাড়ির ছয় পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। ওসি নুরুল আবছার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন আবদুল গাফফার বলেন, খবর পেয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রশাসনের জারি করা লকডাউন মেনে চলতে বলা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার ফল জানার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ)- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে সাবেক এক পুলিশ কনস্টেবল শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মারা যাওয়ার পর এলাকায় করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে প্রশাসনের মাধ্যমে বাড়িটি লকডাউন করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রশিদ জানান, সাবেক পুলিশ কনস্টেবল এনামুল হক সুজা (৭০) দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ১২-১৩ দিন আগে তিনি ফরিদপুর ঘুরে এসে জ্বরে পড়েন। শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায়। গতকাল ভোরে তিনি মারা যান।

ওসি মাহবুবুল আলম জানান, মৃতের বাড়ি ও বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি লকডাউন করা হয়েছে।

নাটোর- জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে নাটোরে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, কাফুরিয়া গ্রামের এক ব্যক্তি জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় গত রাতে তার মৃত্যু হয়। সংবাদ পেয়ে নাটোর হাসপাতালের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠিয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মৃতের বাড়িটি লকডাউন করার বিষয়ে আমরা এখনই ভাবছি না। নমুনা পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নেত্রকোনা- খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের বড়হাটি গ্রামে সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিপেন্দ্র দাস (৫৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন গতকাল। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা এসে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকার সন্দেহে মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

প্রতিবেশী দীনেশ সরকার জানান, দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার পর সর্দি ও জ্বর নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়িতে আসেন নিপেন্দ । এর পর থেকে ধীরে ধীরে জ্বর বাড়ে এবং শ্বাসকষ্টও হয়। একপর্যায়ে বাড়িতে থেকেই তিনি গতকাল ভোরে মারা যান। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অন্য কেউ কাছে না যাওয়ায় শুধু পরিবারের পাঁচজন মিলে তাকে শ্মশানে নিয়ে দাহ করেছে।

ইউএনও এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, আপাতত পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মো. তাজুল ইসলাম জানান, মরদেহের নমুনা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজার- জেলার রাজনগরে এক ব্যক্তি জ্বর ও সর্দির উপসর্গ নিয়ে গতকাল নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বর্ণালী দাশ বলেন, ওই ব্যক্তি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যত শিগগির সম্ভব তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

ইউএনও উর্মি রায় বলেন, ওই ব্যক্তির শারীরিক অন্যান্য সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তবে যেহেতু তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন, তাই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর- সদর হাসপাতালে জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতিকালে মরদেহ নিয়ে পালিয়ে যান স্বজনরা। পরে ইউএনও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিয়ে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন।

ইউএনও বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে আনি। নমুনা পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা চারটি পরিবারের সাতজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।’

চাঁদপুর- মতলব উত্তরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে গতকাল এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে মৃতের বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই বাড়ির তিনটি পরিবারের ২০ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত জাহান মিথেন জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা একাই একটি বসতঘরে থাকতেন। কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জে যান। দুদিন আগে সেখান ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে বৃদ্ধার অসুস্থতার খবর কেউ স্বাস্থ্য বিভাগকে জানায়নি।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, ওই বৃদ্ধাসহ জেলায় জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা আনোয়ারা বেগম (৭২) নামের এক নারী গতকাল সন্ধ্যায় মারা গেছেন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদরে। গতকালই শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তাকে আইসোলেশন কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত