হাজার হাজার অনুমোদনহীন টেস্ট কিট আনছেন মেয়র!
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৪৬ আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৫৭
করোনাভাইরাস সনাক্ত করার জন্য চীন থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানি করা র্যাপিড টেস্ট কিট নিয়ে এক ধরণের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাদের উদ্যোগে এসব র্যাপিড টেস্ট কিট বিতরণও করা হয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত’ করার জন্য এসব কিট ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এসব র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহারের কিছু বিপদ রয়েছে। এগুলোর মান সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে না পারলে পরীক্ষার ফলাফল ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
সেজন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দ্বারা এগুলোর মান নির্ণয় করা জরুরি। কিন্তু এসব র্যাপিড কিট আমদানির ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য সম্প্রতি র্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবনের দাবি করলেও সেটিকে অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফলাফল আসতে পারে। এখানে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফলস নেগেটিভ ফলাফল আসে।
অর্থাৎ একজন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস থাকেলেও র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে সেটি নাও আসতে পারে। এ ধরণের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ১৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, এসব কিটের ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশন (রোগ নির্ণয়) প্রায় শতভাগ হওয়া প্রয়োজন। দেখা গেল কারো দেহে হয়তো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ভুল হলে তাকে হয়তো পজিটিভ দেখানো হতে পারে। আবার যার দেহে করোনাভাইরাস আছে, তার ক্ষেত্রে যদি ফলস নেগেটিভ হয়, তাহলে তো সে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে এবং অন্যদের সংক্রমিত করবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এসব র্যাপিড টেস্ট কিট কিভাবে বাংলাদেশে আসছে সেটি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইসলাম।
তিনি বলেন, সাধারণত যেসব করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সুবিধা নেই, সেসব এলাকায় র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা যেতে পারে। র্য্যাপিড টেস্ট কিটের ক্ষেত্রে মাণ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরী।
এসব কিট আমদানি করছে কারা?
চীন থেকে র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানির ক্ষেত্রে যারা নাম সবার আগে আসছে তিনি হলেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার কিট আমদানি করেছেন। এছাড়া চীনে আরো এক লক্ষ কিট প্রস্তুত আছে। চাইলে সেগুলোও তিনি আনতে পারেন বলে দাবি করেন।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশে যেসব কিট আনছি সেগুলো আমি বিভিন্ন হাসপাতালে দিয়েছি। এছাড়া আমার স্টকে কিছু আছে
র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানি করতে জাহাঙ্গীর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেননি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো বিপদের মোকাবেলার জন্য এনে রাখছি। আমদানির অনুমোদন নিতে সবমিলিয়ে ১৮০ দিন পর্যন্ত টাইম লাগে। এখন বিশ্বজুড়ে মহামারি অবস্থা। এতদিন সময় লাগলে মানুষ বাঁচবো?
তিনি বলেন, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব কিট ব্যবহার করা হবে। জাহাঙ্গীর দাবি করেন, তিনি র্যাপিড টেস্ট কিট ছাড়াও পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) আমদানি করেছেন।
জাহাঙ্গীর র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানি করে অন্যান্য জেলায়ও দিয়েছেন। পাবনার বেড়া উপজেলায় এ ধরণের টেস্ট কিট দিয়েছেন তিনি।
পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন বলেন, তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বেড়া উপজেলার জন্য ২০০ র্যাপিড টেস্ট কিট দিয়েছেন।
এই র্যাপিড টেস্ট কিটের বিপদ সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন কি না? এমন প্রশ্নে বেড়া পৌরসভার মেয়র বলেন, আমি তো বিশেষজ্ঞ নই। এটা আমার জানা নাই। ডাক্তারদের বলেছি এগুলো বুঝে শুনে ব্যবহার করতে। দরকার হলে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলতে।
একই ধরণের টেস্ট কিট গিয়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। এখানে ২০০ কিট দেয়া হয়েছে।
নাটোরের সিভিল সার্জন বলেন কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এসব কিট দিয়ে যাতে পরীক্ষা না করা হয় সেজন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে যদি সন্দেহজনক নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তাহলে আমরা সেগুলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিই। সেখানে পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, র্যাপিড টেস্ট কিট বাংলাদেশে এখনো অণুমোদন দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কেউ যদি সেটি আমদানি করে তাহলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে করেছে বলে উল্লেখ করেন আলমগীর। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে