ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

পানির দামে দুধ, খামারিদের মাথায় হাত

পানির দামে দুধ, খামারিদের মাথায় হাত
ফাইল ছবি

গভীর সঙ্কটে পড়েছে দেশের দুগ্ধ শিল্প। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এ শিল্পের। কোথাও কোথাও পানির দামে দুধ বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিন দেশে উৎপাদিত হওয়া ২৭ হাজার মেট্টিক টন দুধ খামারিরা না পারছেন বেচতে, না পারছেন ফেলে দিতে। এই অবস্থায় দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ দুগ্ধ খামারি আছেন বিপদের মধ্যে।

সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই জরুরি ভিত্তিতে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রকিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দুধ সংগ্রহ করে তা বাষ্পায়িত করে যতো বেশি সম্ভব গুঁড়ো দুধ বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ডেইরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিওএ) সভাপতি শাহ ইমরান বলেন, দেশে ডেইরির সার্বিক অবস্থা এখন খুবই খুবই খারাপ। দেশে শুধু দুগ্ধ খামারের সংখ্যাই প্রায় সাড়ে তিন লাখ। গড়ে দশ লিটার দুধ দেয় এমন গাভীর পেছনে দিনে প্রায় আড়াইশ টাকা খরচ হয়। খামারিরা এখন এই টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে বিপণনের পথ সঙ্কুচিত হওয়ায় পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী অনেক বড় কোম্পানিও বিপাকে পড়েছে বলে তাদের ভাষ্য। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির অন্যতম যোগান হিসেবে বিবেচিত দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিডিওএ সভাপতি ইমরান বলেন, লকডাউনের পর সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মিষ্টির দোকান বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব ডিসির কাছে দোকানপাট বন্ধের চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল। পরে আমাদের বার্তাটা ডিসিদের সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়নি। মফস্বলে অনেক দোকান প্রশাসন খুলতে দেয়নি। সেসব জায়গার খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে দেশের এই পরিস্থিতিতে মিষ্টিই বা কে খাবে? ক্রেতাইতো নেই।

ইমরান বলেন, বেচতে না পেরে অনেক দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে খামারিদের। কেউবা ১০-১৫ টাকায় হাতে পায়ে ধরে মানুষকে দিচ্ছে। পশুগুলোকেও খাওয়াতে পারছে না। লোকসানের বোঝা প্রতিদিন বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৯৯ লাখ মেট্টিক টন দুধ উৎপাদন হয়। প্রতিদিন হয় ২৭ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বেশিরভাগ কেনে মিষ্টির দোকান। এরপর বাসায় দুধ নেয় এবং বাজার থেকে কেনে।মিষ্টির দোকান তো বেশিরভাগই বন্ধ। বাসাবাড়িতে দুধ নিতে পারে না। বাইরে তো বাজারে মানুষ যেতেই পারছে না। সাধারণ ক্রেতাদের কেনার জন্য ছোট ছোট দোকানে যেখানে দুধ রাখা হত সেগুলো বন্ধ। কাজেই দুধ বিক্রির বড় যে সুযোগগুলো ছিল সেগুলো এখন বন্ধ।

দুধ বিক্রি না করতে পেরে কিছু কিছু খামারি ঘি, মাখন, ছানা তৈরি করে রাখছেন। কিন্তু সেটাও বেশিদিন রাখা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন বিএলআইআরএর সাবেক মহাপরিচালক।

শাহ ইমরান বলেন, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সচিবকে আমরা বললাম যে, আমাদের দেশে পাউডার দুধের প্ল্যান্ট আছে যাদের, তারা প্রতিদিন তিন লাখ লিটার দুধ থেকে পাউডার করতে পারে। কিন্তু তারা কেউ করে না। এখন যদি তারা পাউডার করে রাখে তাহলে সামনে রোজা আছে, ঈদ আছে চাহিদা বাড়বে। বিদেশি মুদ্রাও বাঁচত। তারা এই পাউডার দুধটা তৈরি করলে খামারির উপকার হত। ত্রাণ সহায়তায় দুধকে সংযুক্ত করার প্রস্তাবও রেখেছিলাম। তা করা গেলে মানুষের প্রোটিনের জোগানও বৃদ্ধি পাবে।

আর খামারিদের বাঁচাতে হলে তাদের নগদ প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার কৃষকদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে ক্ষুদ্র খামারিদের কথাও আছে।

এনএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত