১০ টাকা কেজি চালে চেয়ারম্যানের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫৭
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেশ কিছুদিন আগেই কর্মহারা হয়ে যান বসির মোল্যা (৩৫)। যানবাহন না পেয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বয়স্ক বাবাকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে নড়াইল সদর উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। তার মায়ের নামে চালু থাকা কার্ডে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকার চাল না পাবার কারণ জানতে চান তিনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও চাল ডিলার তাকে জানিয়েছেন, তার মায়ের নামের কার্ড ইউএনও বাদ দিয়েছে। কিন্তু এ দুই অফিস থেকে জানানো হয়েছে, কারো নাম বাদ দেয়া তাদের বিষয় নয়।
সদরের বিছালী ইউনিয়নের বিছালী গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আনোয়ার মোল্যার ছেলে বসির এ কথাগুলোর পাশাপাশি আরও বলেন, এবার চাল আনতে গিয়ে শুনি আমাদের কার্ডের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। যাদের নামে কার্ড দেওয়া হয়েছে তাদের প্রায় সবার পাকা ভবন, কারো দোতালা ভবন, অনেকের মাছের ঘের ও গরু রয়েছে। তারা এসব চাল নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছে। এসব কথা আপনারা প্রমাণ করে দেখেন। আমরা এক সপ্তাহ রুটি খেয়ে আছি। নওয়াপাড়া ঘাটে মালামাল নামানোর কাজ করতাম। এখন কোনো কাজ নেই। কোনো সাহায্যও পাইনি। নিজের চাষের কোন জমি নেই। এখন খাব কি?
একই ইউনিয়নের মধুরগাতি গ্রামের প্রয়াত জারি শিল্পী ইসমাইল বয়াতির স্ত্রী ভূমিহীন পিঞ্জিরা বেগম গত তিন বছর কার্ডের মাধ্যমে চাল উত্তোলন করলেও এবার তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ইউপি মেম্বর অভিযোগ করে বলেন, নতুন করে কার্ডধারীদের তালিকা তৈরীর সময় চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়নি।
জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। একজন কার্ডধারী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল তুলতে পারবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনিচুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে তার পছন্দের লোক নিয়ে এ তালিকা তৈরী করেছেন।
এছাড়া চেয়ারম্যান ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক যে কোনো কাজে মেম্বরদের বাদ দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেন। গত ২০১৮ সালে ইউনিয়নের মেম্বররা জেলা প্রশাসকের কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
বিছালী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বর কালাম মোল্যা বলেন, আমরা শুনেছি নতুন কার্ড হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে দুস্থদের কোনো নাম চায়নি এবং পরামর্শও করেনি। হতদরিদ্র কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে, তাদের কার্ড বাদ হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের এসব অসহযোগিতা এবং অনিয়মনের বিষয়টি গত দেড় বছর আগে ৯ মেম্বার মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম।
৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার বড়াল-আটঘরা গ্রামের আবু হানিফ বিশ্বাস জানান, আমি এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান হলেও আমাকে কোন মূল্যায়ন করে না বা ডাকেও না। শুনেছি কার্ড রদবদল হয়েছে। ৪-৫ জন বলেছে, তাদের নাম কার্ড থেকে বাদ গিয়েছে। সমস্ত মেম্বাররা তাকে ভয় পায়। চেয়ারম্যান থাকে ঢাকায়। দু’তিন মেম্বারকে নিয়ে তিনি সবকিছু করেন।
বিছালী ইউপি'র ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বর মধুরগাতি গ্রামের মঞ্জুর হোসেন বলেন, নতুন কার্ডধারীদের তালিকা করার ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমিসহ অধিকাংশ মেম্বরের সাথে কোনো পরামর্শ করেননি। পুরোনো তালিকা থেকে কমপক্ষে প্রকৃত ১৫ জনের নাম বাদ গেছে।
অভিযুক্ত বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনিচুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেম্বরদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে এ কার্ড পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যারা মারা গিয়েছে এবং যারা এলাকায় নেই, তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত দুস্থরা কার্ড পেয়েছে বলে দাবি করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মনিরুল হাসান বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, স্থানীয় মেম্বর এবং গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি কমিটি এ কার্ডের তালিকা তৈরি করে। সম্প্রতি গত ১ মাস পূর্বে এ তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। কেউ যদি বাদ যায় তাহলে সরকারের জিআরসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে তাদের সহায়তা করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম জানান, বিষয়টি আমি দেখছি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে
