ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মাঠে নামলেন পুলিশ সুপার, কাটলেন কৃষকের ধান

  শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ১৯:২৪

মাঠে নামলেন পুলিশ সুপার, কাটলেন কৃষকের ধান

কৃষকের সংকট লাঘবে কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিক ও অর্থ সংকটে ভুগছেন জেলার পাঁচ উপজেলার অনেক কৃষক। তাই কৃষকদের কষ্ট লাঘবে বোরো ধান কেটে ও মাড়াই করে গোলায় তুলে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।

এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সদর উপজেলা বাজিতখিলার বালিয়া গ্রাম ও নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা গ্রামে ধান কাটার কাজ শুরু করা হয়। এদিন পুলিশ সুপার নিজে স্থানীয় এক কৃষকের জমিতে নেমে ধান কেটে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে কৃষকদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

এর আগে সোমবার (২০ এপ্রিল) সকালে করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শেরপুর জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ জেলার সাথে অনুষ্ঠিত ওই কনফারেন্সে শেরপুরের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান ও পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম।

এ দিন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে আসস্থ করে বলেন, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারে এবং ফসল ঘরে তুলতে পারে, সেজন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে যে সফল আবাদ হয়েছে তা যেন ঘরে তোলা যায়, সেজন্য কৃষকদের সংগঠিত করা হয়েছে। সে লক্ষে ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার জন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। এই মুহূর্তে আমাদের বড় চেলেঞ্জ কৃষক যেন খাদ্যশষ্য ঘরে তুলতে পারে এবং লকডাউন নিশ্চিত করা।

জেলা পুলিশের এ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এগিয়ে এসেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলা স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম।

পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা ধান কেটে দেয়ায় খুশি সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামের কৃষক সামেদুল হক। এদিন পুলিশ সদস্যরা তার ৪০ শতাংশ জমির ধান কেটে দেয়।

সামেদুল বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিক ও অর্থ সংকটে ভুগছেন জেলার সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার লাখো কৃষক। এবার আমার ধান আবাদে সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। হাতে তেমন টাকা ছিল না। এর ফলে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন সময় পুলিশ সদস্যরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা ধান কেটে দেয়ায় তার কমপক্ষে ১৪ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব হাসান শাকিল ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে পুলিশের সাথে করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছি। কৃষকের ধান কাটতে পেরে আমরাও খুশি।

একইদিন বিকেলে নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা গ্রামের কৃষক আবু রায়হানের ৬৫ শতক জমির পাকা ধান কাটা হয়। এতে অংশ নেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন শাহ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম হীরাসহ পুলিশ ও স্টুডেন্টস কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।

পুলিশ সুপার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাদেশ এখন স্থবির। এই পরিস্থিতিতে বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। আর জেলা লকডাউন থাকার কারণে শ্রমিক সংকটে অনেক কৃষকই ধান কাটতে পারছেন না। তাই জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কৃষকের ধান কেটে দেবে। যখনই যে কৃষক ধান কাটা সমস্যায় পড়বেন, তা জেলা পুলিশকে জানালে তার ধান কেটে দেয়া হবে।

জেলায় এবার ৮৯ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এছাড়া ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত