ঢাকা, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

করোনার নমুনা পরীক্ষায় ধীরগতি, ভোগান্তি

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২১:৫৪  
আপডেট :
 ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২২:১৫

করোনার নমুনা পরীক্ষায় ধীরগতি, ভোগান্তি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর একটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান (ছদ্মনাম)। তার বাড়ি বাসাবোতে। থাকেন রাজধানীর গুলশানে। তার সাথে থাকা তার এক রুমমেট করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনিও তার অপর রুমমেটের মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তারা দু’জন রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে গিয়ে ২৬ এপ্রিল (রোববার) কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন।

মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আগামী দিনে অর্থাৎ ২৭ এপ্রিলের মধ্যে তার করোনা পজিটিভ হলে মেসেজের (খুদে বার্তা) মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।

এরইসাথে তিনি ২৫ এপ্রিল (শনিবার) রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইডিসিআর) হটলাইনে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানান। আইডিসিআরের পক্ষ হতে ২৭ এপ্রিল (সোমবার) তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ফলাফল মেইলে জানানোর কথা বলা হয়। এরপর আজ ৩০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) তিনি আইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের ল্যাবের অনেক কর্মী অসুস্থ থাকায় আরো দুই-একদিন সময় লাগবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার মুগদা হাসপাতাল থেকে আরমানের রুমমেটের পরীক্ষার ফলে দেখা যায় তার করোনা পজিটিভ। কিন্তু আরমানের ফলাফল আসেনি। এরপর তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযাগ করলে তারা জানান, রোগীর টেস্টের রিপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন তারা। পরবর্তীতে আজ আবার রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এমন পরিস্থিতি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছেন আরমান। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রুমের দু’জন লোক করোনায় আক্রান্ত হলো। আমি আর আমার রুমমেট একই সাথে নমুনা দিলাম। তারটা পজিটিভ আর আমারটা নাকি হারিয়ে গেছে! ভয়ে আছি, এলাকার লোকজন জানলে কেমন ব্যবহার করবে তা নিয়ে। আর পরিবারের কথা ভেবেও চিন্তা হচ্ছে। মানসিকভাবে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। আজ আবার নমুনা দিয়ে আসছি। তারা কী ধরনের উদাসীনতা দেখালেন বুঝে আসে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইডিসিআর) পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা আগে নমুনা সংগ্রহের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দিতাম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে অনেক স্যাম্পল জমা হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু সময় বেশি লাগছে। তার ওপরে এখন যেহেতু রোজার দিন, মাঝখানে আমাদের একটু ব্রেক নিতে হয়। অনেক স্যাম্পল জমে আছে। তাই এখন আমাদের তিন থেকে চারদিন সময় লেগে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ, আমাদের যেহেতু সময় একটু বেশি লাগছে, তাই যারা নমুনা দিচ্ছেন তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিন ম্যান্টেইন করতে হবে। তাছাড়া লক্ষণ, উপসর্গ না থাকা পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তাই পরামর্শ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব লক্ষণ, উপসর্গের কথা বলা হচ্ছে তা না দেখা দেয়া পর্যন্ত কোভিড- ১৯ পরীক্ষা করা উচিত না। কেউ যদি কোনো করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তার ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারিন্টে থাকতে হবে। আমরা সব সময় বলেছি যাদের লক্ষণ, উপসর্গ নেই তাদের পরীক্ষাটি না করতে।

যাদের লক্ষণ-উপসর্গ নেই তাদের পরীক্ষা করা উচিত নয় উল্লেখ করে ফ্লোরা বলেন, আমাদের বেশি সময় লাগার অন্যতম একটা কারণ, দেখা যায় অনেকে লক্ষণ, উপসর্গ নেই তারপরেও নমুনা নিতে বলছে। কিন্তু যারা প্রকৃতপক্ষে আক্রান্ত তাদের ছাড়া অন্যদের পরীক্ষা করলে নেগেটিভ আসবে। এতে পরবর্তীতে আরো সমস্যা হতে পারে। কারণ নেগেটিভ ফল আসার পর তার ১৪ দিনের মাঝে আবার করোনা পজিটিভ হতে পারে। কিন্তু সে সময় এই বোধটা রোগীর মাঝে কাজ না করার ফলে তিনি অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং অন্যদের সংক্রামিত করেন। সে জন্য আমরা সব সময় পরামর্শ দেই যে, লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলে রোগীর সংস্পর্শে আসলেও অন্তত একসপ্তাহ তিনি কোয়ারেন্টিন মেইন্টেন করবেন এবং তাৎক্ষণাৎ নমুনা পরীক্ষার করার দরকার নেই।

একই বিষয়ে মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত