ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

২০০ কোটি টাকা বকেয়া, রাজপথে আখ চাষিরা

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২০, ১৬:০৬

২০০ কোটি টাকা বকেয়া, রাজপথে আখ চাষিরা

রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে আখ চাষিদের বকেয়া প্রায় ২০০ কোটি পাওয়ার দাবিতে পাবনা চিনিকলের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুুপরে আখচাষি কল্যাণ সমিতির পাবনা শাখা এবং বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের উদ্যোগে এই সমাবেশ করা হয়।

চিনিকলের আখচাষি প্রতিনিধিরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সমাবেশে অংশ নিয়ে তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। অনেক চাষি নিরাশ হয়ে মিল গেটে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছে দেন।

পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে চিনিকলের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও আখচাষি সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লি. এর সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা, আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লি. এর সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু, আমজাদ হোসেন মালিথা, মাহাতাব উদ্দিন মোল্লা, হাসান আলী, পাসুমি’র ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাবনা চিনিকলের আখ চাষিদের বকেয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা। আর দেশের ১৫টি চিনি কলে আখ বিক্রির পর তাদের পাওনা প্রায় দু’শ কোটি টাকা।

তারা জানান, করোনা সংকটে আজ তারা অনেকেই কর্মহীন। এদিকে তাদের দীর্ঘ ১৬ মাসের ফসল আখ বিক্রি করে ৪ মাস ধরে তাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছেন না। জনদরদি প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছেন। চাষিদের ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের কথা বলেছেন। অথচ দেশের এই মহাসংকটের সময় প্রায় ৫ লাখ আখচাষি এসব সুবিধার বাইরে। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।

তারা জানান, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আখ। সেই আখ উৎপাদনকারী চাষিরা আজ অভুক্ত। চাষিরা তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- নগদ টাকায় আখ নিয়ে চাষিকে আখ চাষে উৎসাহিত করা; আখ চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ- বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, আখের পরিচর্যা খরচ সময়মতো প্রদান; অর্থ মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী কৃষি ঋণের সুধ-আসল দিগুণের পর চক্রবৃদ্ধি হারে আর না বাড়ানো, তামাদি ঋণ পরিশোধের স্বার্থে সার্টিফিকেট মামলা প্রতাহার করে ঋণ পরিশোধের জন্য দুই বছরের সময় বৃদ্ধি করা; আখের মূল্য পেতে নাজেহাল বন্ধ করে আখ চাষির আখের টাকা পরিশোধের স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০০০ (দুই হাজার) কোটি টাকার সিডমানি প্রদান; নিবন্ধিত আখ চাষি হওয়ায় চিনিকলে আখ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আখ চাষের ঋণ ১১ শতাংশ সুদ পরিবর্তন করে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাভুক্ত করা, জাতীয় বাজেটে রোপা পদ্ধতিতে আখ চাষ; মুড়ি বা সরাসরি সকল পদ্ধতিতে আখ চাষে স্থায়ী ভর্তুকি কৃষি মন্ত্রণালায়ের পরিবর্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমে প্রদান এবং কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সকল কৃষকের স্বার্থে জিও, এনজিও, অর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তফসিলি ব্যাংক থেকে নেয়া কৃষি ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা দুই বছর করা।

ঈশ্বরদীর পাকুড়িয়া গ্রামের ৭০ বছরের বেশি বয়সী আখ চাষি আব্দুল মালেক মালিথা বলেন, আমি ২৫-৩০ বিঘা আখ চাষ করি। আর চাল কিনে খাই। ১৬ মাস ধরে পরিচর্যা করে আখ পাই। অথচ সেই আখ বিক্রির টাকা পচ্ছি না। চলতি করোনা দুর্যোগে ও রমজানে টাকার প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও তা পাচ্ছি না। সন্তানদের লেখাপড়ার চাহিদা মেটাতে আর পাওনাদারদের চাপে আমরা দিশেহারা।

ঈশ্বরদীর সাড়া গোপালপুর গ্রামের আখচাষি মাহাতাব মোল্লা জানান, আমরা চরম সমস্যায় আছি। ১৬ মাস ধরে ফসল চাষ করে মিলে আখ দিয়ে টাকা পাচ্ছি না। এতে জমিতে নতুন আখ ক্ষেতেরও পরিচর্যা করতে পারছি না।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আসন্ন ঈদে ছেলে-মেয়েদের নতুন করে একটা জামাকাপড় কিনে দেব, তাও পারছি না। কৃষকবান্ধব সরকার একটা ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করি।

আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লি. এর সেক্রেটারি আরসার আলী ডিলু জানান, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তিনি আখ চাষি ও চিনিকলগুলো বাঁচানোর দাবি জানান।

তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে আখের অভাবে চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মিলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারি বেকার হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লি. এর সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, সাংসারিক সমস্যার পাশাপশি তারা টাকার অভাবে অন্য ফসল পর্যন্ত চাষবাস করতে পারছেন না। এখন আখ চাষের পরিচর্যা করার জন্য বাড়তি টাকা দরকার হচ্ছে। অথচ তারা চার মাস আগে চিনিকলে আখ বেচেও টাকা পাচ্ছেন না। অর্থাভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

তিনি চলতি মুজিববর্ষে ৫০০ কোটি টাকার আপদকালীন তহবিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার লিখিত বক্তব্যে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমদ বলেন, পাবনা চিনিকলে প্রায় ৫ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে। ফলে আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সমস্যা সারা দেশেই। তিনি আখ চাষিদের দুরাবস্থার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।

পরে আখ চাষিদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বরাবর করা এসব দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে দেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত