ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

লাশের ভাগাড়ে ৪৫ বছরে ২৫ খুন!

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২০, ২১:০৭

লাশের ভাগাড়ে ৪৫ বছরে ২৫ খুন!

লাশের ভাগাড় হিসেবে খ্যাত রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। এলাকার নাম শুনেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। প্রচলিত আছে নতুন আগন্তুকদের অনেকে নাকি এলাকায় প্রবেশে দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে ঢোকেন। দিনের বেলায় ঢুকতেও না-কি গা ছমছম করে। আর রাতের বেলায়, সেটা না-কি ভাবাই যায় না! খোদ পুলিশের লোকজনও বাহিনী ছাড়া এখানে প্রবেশ করেন না।

বারো রঙের মানুষের আনাগোনায় গড়ে ওঠা স্থানটি ক্রমেই সারাদেশে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। এখানে দিনের আলোয় যেমন ক্রাইম হয়, তেমনি টাকাও ওড়ে। এলাকাটি এখন সবার কাছে ‘আলাদিনের চেরাগ’ হিসাবে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে এ এলাকায় বসবাস করলেই কেবল রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া যায়। এখানে নেই কোন শিল্প কারখানা। নেই ব্যবসা কিংবা বাণিজ্য। তবুও এখানে প্রতিদিন কম করে হলেও কোটি টাকা ওড়ে। এ টাকা ধরতে গিয়ে কেউ ধনী হচ্ছে, আবার কেউ ধরা খাচ্ছে। কেউ আবার মারা পড়ছে।

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে ডেমরার পাশে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। এলাকার আধিপত্য বিস্তার, নানা অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার অসম প্রতিযোগীতা চলে এখানে রাত-দিন। আর এসবকে কেন্দ্র করেই গত ৪৫ বছরে ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি। ফলে হত্যাকারীরা দিনকে-দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা দাবি করেন, যদি হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার হতো, তাহলে আর কেউ নতুন করে খুন করার সাহস করতো না। তবে চনপাড়াবাসীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, চনপাড়াবাসীকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পায়। রাজনৈতিক শেল্টার বন্ধ হয়ে গেলে চনপাড়া শান্ত হয়ে যাবে।

চনপাড়াবাসীর আশঙ্কা, অপরাধ যেভাবে চনপাড়ায় বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে চনপাড়ায় হত্যাকাণ্ড ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে। এখনই নিয়ন্ত্রণে না নিলে চনপাড়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী ভাঙা, ঘর ভাঙা মানুষদের শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষা ওয়াসার ১২৬ একর জমিতে ঠাঁই দেন। ধীরে ধীরে চনপাড়া বস্তি হিসাবে রূপ নেয়। ১২ হাত বাই ১৫ হাতের কয়েক হাজার ঝুঁপড়ি ঘরে প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস চনপাড়া পুনর্বাসনে।

বিশ্বের অনেক দেশেই বস্তি থেকে উঠে আসা লোকেরা কালক্রমে বিখ্যাত হয়েছেন। অনেকে জগৎবিখ্যাত ব্যক্তির শৈশব কেটেছে বস্তিতে। কিন্তু চনপাড়া পুনর্বাসনের পরিচিতি হয়েছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী, চাদাবাজ ও ভাড়াটে খুনি হিসাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসনে গত ৪৫ বছরে ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

১৯৭৬ সালে বাদশা মিয়া খুনের মধ্য দিয়ে চনপাড়ায় 'খুনের শিল্পায়ন' শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে খুনের শিকার হন খয়ের পার্টির সদস্য হাফেজ আলী, ১৯৮২ সালে খুন হন পারভেজ মিয়া, ১৯৯৪ সালে খুনের শিকার হয় চাঁন মিয়া, ২০০৩ সালে ফিরোজ সরকার, ২০০৪ সালে ফারুক মিয়া। ২০০৫ সালে খুন হয় পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া ও ক্রিকেটার ফালান মিয়া। ২০০৮ সালে খুন হন আব্দুর রহমান, ২০১১ সালে হত্যার শিকার হয় র‌্যাবের সোর্স খোরশেদ মিয়া। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ প্রজন্মলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে হত্যার শিকার হয় আসলাম হোসেন নামে এক স্কুলছাত্র, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাসান মুহুরিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ জুন খুন হন নিহত হাসান মুহুরির স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্রি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ মে খুন হন বিউটি আক্তার কুট্রি ও তার স্বামী হাসান মুহুরী হত্যা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত