ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

আম্পানের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত লিচু চাষিরা

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ মে ২০২০, ১৮:৩৩

আম্পানের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত লিচু চাষিরা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচু চাষিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। প্রায় ২২ শতাংশ আধাপাকা লিচু ঝড়ে গেছে। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দেড়শ’ কোটি টাকা।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে আরো ১ থেকে ২ দিন লেগে যাবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। তবে আম ও লিচু বাগানের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে অনেক চাষির পথে বসার অবস্থা বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে পাবনার ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লিচুর। লিচুর বোঁটা নরম হওয়ায় ঝড়ো বাতাসে আধাপাকা প্রায় ২২ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার হিসাব অনুযায়ী শুধু লিচুতেই ১৫৪ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ২০ শতাংশ আম, ১০ শতাংশ সবজি এবং ২৫ শতাংশ জমির কলা নষ্ট হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬ হাজার মে. টন। উৎপাদিত এই লিচুর বাজারমূল্য প্রায় সাতশ’ কোটি টাকা। প্রতিটি বাগানে থোকায় থোকায় লিচু এখন পাকার অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ, সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি এবং ১৮০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদসহ প্রতিটি উপজেলাতেই প্রচুর আমের চাষ করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি রমজান আলী মজুমদার ও ভাড়ইমারি গ্রামের লিচু চাষি রিয়াজ সর্দার জানান, লিচু গাছ উপড়ে পড়েছে, ডাল ভেঙে গেছে, লিচু ঝড়ে ড়েছে। অনেক স্থানে গাছ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু লিচু ঝরে গেছে। প্রতিটি গাছে ৫০ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক আজাহার আলী ক্ষয়-ক্ষতির এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে লিচুর ক্ষতিটিই চোখে পড়ার মতো। ২২ শতাংশ লিচু ঝড়ে গেছে। তবে পুরো ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে আরো ২/১ দিন লেগে যাবে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বোরো ধানের ক্ষতি না হলেও আউশ ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আম, সবজি, কলাসহ অন্য সব ফসলের ক্ষতি নির্ণয়ের কাজ চলছে। এছাড়া ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

ঈশ্বরদীর খ্যাতিমান চাষি এবং বাংলাদেশ ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা জানান, চলতি করোনা সংকটের কারণে সবজিপ্রধান ঈশ্বরদী এলাকার চাষিরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্থ। এখন এ ঘূর্ণিঝড় মরার উপর খড়ার ঘা’র মত। চাষিদের পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ফল-ফসলের ক্ষতি ছাড়া ঝড়ে তেমন কোনো বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কোনো হতাহতের ঘটনাও নেই। এরপরও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ সাময়িক যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা দ্রুত নিরসনের জন্য কাজ চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত