লকডাউন নিয়ে যে ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারি সহসা দূর হচ্ছে না। কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না। যতদিন এর প্রতিষেধক আবিষ্কার না হচ্ছে, ততদিন করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সব ধর্ম এবং বর্ণের মানুষ এ উৎসবে সমানভাবে শামিল হন। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে উপভোগ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে লকডাউন বিশ্বের প্রায় সকল দেশই শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য আয়-রোজগারের পথ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের নয়ই। তিনি বলেন, দোকান-পাট ও ব্যবসা বন্ধ থাকায় মালিকদের আয় বন্ধ হয়েছে, কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশবাসীর সঙ্গে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেন তিনি। এছাড়া করোনায় মৃতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। আপনি সুরক্ষিত থাকলে পরিবার সুরক্ষিত থাকবে। এতে প্রতিবেশী সুরক্ষিত থাকবে এবং দেশ সুরক্ষিত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা যাবে। অথবা ২৮ মে’র দিকে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানতে পারব। ছুটি বাড়বে কি না সেটা প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিলে জানা যাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা না কমলেও ছয় মাস এক বছর কী লকডাউন দিয়ে বসে থাকতে হবে। তাহলে এর বিকল্প কী? বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে, মাস্ক ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই বের হবে, বাসায় থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বাঁচতে চাইলে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই নিতে হবে। সামনে যেই দাঁড়াবে, মনে করবেন করোনাভাইরাস আছে তার। আপনাকে মরিয়া হয়ে বাঁচতে হবে তার কাছ থেকে। আমাদের সচেতন হয়ে বাঁচাতে হবে দেশকে। আমেরিকায় দুই হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু সব খুলে দিয়েছে তারা। এভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
দেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ। সে অবস্থায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর কয়েকদফা বাড়িয়ে সর্বশেষ আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি দেয়া জয়। ছুটির সঙ্গে বন্ধ গণপরিবহনও। কিছুদিন ধরে ব্যবসায়ে শিথিলতা এসেছে। সীমিত আকারে চলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শপিং মল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৫৩২ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৩ হাজার ৬১০ জনে। সুস্থ হয়েছে ৪১৫ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ৬ হাজার ৯০১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।’