ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মানব পাচারকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সক্রিয় দালালচক্র

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২০, ১৬:২৮

মানব পাচারকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সক্রিয় দালালচক্র

মানব পাচারকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সক্রিয় রয়েছে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র। এই চক্র টার্গেট করে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের। আর এই চক্রের শিকার হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে তারা। দালাল চক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। এতে স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানো অনেক যুবকের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। এতে অনেক যুবককে জীবন দিতে হচ্ছে অখৈ সমুদ্রে অথবা বুলেটের আঘাতে।

সম্প্রতি মুক্তিপণের দাবিতে লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত সুজন মৃধা (২০) নামে এক যুবক। ওমর শেখ (২২) নামে আরেক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এদের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা ও সুন্দরদী গ্রামে।

নিহত সুজন মৃধার বাবা কাবুল মৃধা জানান, গোহালা ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের মানব পাচার চক্রের সদস্য রব মোড়লের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। আর এর জন্য তাকে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দেন।

আহত ওমর শেখের বাবা মো: কালাম শেখ জানান, রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুন্দরদী গ্রামের লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ৪ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দিয়ে তার ছেলেকে লিবিয়া পাঠান। বর্তমানে সে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

নিহত ও আহতের পরিবার আরো জানান, এই অঞ্চলের প্রধান দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস শেখ। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে সে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য কাস্টমার ও টাকা সংগ্রহ করেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় দালালও কমিশন পান।

মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল সরদার (৬৫) ও আকিজুল ইসলাম বাবুল (৬৮) বলেন, এই দালাল চক্র মুকসুদপুরসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৪ থেকে ৮ লক্ষ এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা নেন। পরে সমুদ্র পথে তাদের ইউরোপে ও সড়ক পথে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয় দালালদের মাধ্যমে। তখন ওইসব দালালরা আবার বিদেশগামী সদস্যদের পরিবারগুলোর কাছে বিভিন্ন পন্থায় মুক্তিপণ দাবি করে। এতে অনেক যুবকের স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা বরং মানব পাচারকারী হাতে অথবা অবৈধ পথে নৌকায় করে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে যাবার সময় অখৈ সমুদ্রে জীবন দিতে হচ্ছে।

রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুন্দরদী গ্রামের লিয়াকত মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ওমর শেখকে লিবিয়া পাঠাননি। আমার মামাতো ভাই নুর আলম লিবিয়া থাকে। তার মাধ্যমে আমার আপন চাচাতো ভাই ইমন মোল্লাকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। এরা লিবিয়া যাওয়ার জন্য ঢাকার আবুল হোসেন নামে এক লোকের কাছে টাকা দেন। টাকা দেয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান। আর লিবিয়ায় তার চাচাতো ভাই ভাল আছেন বলেও তিনি জানান।

ওই মেম্বার আরো জানান, তিনি এখানে মেম্বার হলেও ৬ মাস মালেশিয়া থাকেন আর ৬ মাস বাংলাদেশে থাকেন। সেখানে তার ব্যবসা আছে। আর তিনি যখন মালেশিয়া থাকেন তখন তার ভাই তার মেম্বারি চালান।

এ ব্যাপারে বর মোড়লের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। এখন মনে হচ্ছে আমাতের এখানে একটি সক্রিয় দালাল চক্র রয়েছে। যারা মানব পাচারের কাজ করছে, এখন তাদের তথ্য সংগ্রহ করে বা কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত