ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

খুঁটির সঙ্গে বেঁধে কিশোর নির্যাতন, এলাকায় তুলপাড়

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২০, ১৭:৩২

খুঁটির সঙ্গে বেঁধে কিশোর নির্যাতন, এলাকায় তুলপাড়

১৬ বছরের কিশোরের উপর রাতভর নির্যাতন করলেন ইউপি সদস্য। চুরির অপবাদে রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা অবধি পেছনে হাত বেধে রাখা হয়।

বাধা অবস্থায় একাধিক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সর্বশেষ গ্রাম পুলিশ শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে খুটির সঙ্গে বেধে রাখা হয় এ কিশোরকে। শরীরের একাধিক স্থানে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ই মে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও গ্রামে।

নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের পরিবার দুর্বল তাই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া স্থানীয়ভাবে শেষ করে দেয়ার কথা বলে মুস্তাফিজের পরিবারকে থামিয়ে রাখে।

ঘটনার ১৫ দিন পেড়িয়ে গেলেও কোনো বিচারই পাচ্ছেন না নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের পরিবার। নির্যাতনে শিকার কিশোর মোঃ মুস্তাফিজ (১৬) কুলাউড়ার টিলাগাও ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।

নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের চাচা আব্দুল হান্নান বলেন, গত ১৪ মে ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া ও তার দলবল আমার ভাতিজাকে চুরির অপবাদ দিয়ে সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত গ্রাম পুলিশের বাড়ির বারান্দায় বেঁধে রেখে অমানষিক নির্যাতন চালায়। তার সমস্ত শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এখনো সে পরিপূর্ণভাবে সেরে ওঠেনি!

নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের চাচা এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্যাতনের সময় স্থানীয় ইউপি সদস্যকে শিশুটিকে নির্যাতন না করার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি তা মানেননি বরং রাতভর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের চাচা বলেন, এটা স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করায় আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করে বসে আছি। আমরা গরিব মানুষ পুলিশের কাছে গিয়ে যে অভিযোগ করবো সেই সাহসও পাচ্ছিনা।

তিনি বলেন, মুস্তাফিজ এখনো রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে আমাকে আর মারবেন না বলে ঘুম থেকে উঠে পরে। মুস্তাফিজ শারীরিক এবং মানুষিকভাবে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।এই ঘটনার পর থেকে সে কেমন জানি হয়ে হয়ে গেছে।কারো সাথে কথা বলে না। একা একা নিজে নিজে কথা বলে। স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলায় আমরা সাংবাদিকদেরও এ ঘটনা জানাইনি কিন্তু আজ পর্যন্ত ইউপি সদস্য এ বিষয় নিয়ে কোনো কথাই বলছেন না।

ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাদশা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন দলবদ্ধ হয়ে কিশোরের উপর নির্যাতন চালান বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে টিলাগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাদশা মিয়ার মুঠোফোনে কল করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।

টিলাগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক বলেন, আমি করোনার কারণে কর্মহীন মানুষদের বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী সঠিকভাবে পাচ্ছে কিনা এ বিষয়ে ব্যাস্ত ছিলাম তাছাড়া নির্যাতনের শিকার মুস্তাফিজের পরিবার থেকেও আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমন জঘন্য একটি ঘটনা ঘটেছে যদি তারা আমাকে জানাতো আমি তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।

তিনি জানান, আপনি যেহেতো জানিয়েছেন আমি আগামীকালের মধ্যে এ বিষয়ে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শিশুদের উপর এমন অমানুষিক নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না জানিয়ে তিনি বলেন, সে যদি অপরাধ করেই থাকে তার জন্য আইন রয়েছে। তাই বলে রাতভর বেঁধে রেখে এমন মর্মান্তিক নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, আমি কিছুক্ষন আগেই ঘটনা জেনেছি এবং ছেলেটির নির্যাতনের পর তুলা একটি ছবি পেয়েছি ।আগামীকাল এ বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত