ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৩ অসচ্ছল পরিবারের তালিকায় ৮ জনই চেয়ারম্যানের স্বজন!

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২০, ১৬:০৫

১৩ অসচ্ছল পরিবারের তালিকায় ৮ জনই চেয়ারম্যানের স্বজন!

এডিপি’র অর্থায়নে ১৩ অসচ্ছল পরিবারকে টেউটিন দেয়া হয়েছে। ওই ১৩ অস্বচ্ছল সুবিধাভোগী পরিবারের তালিকার ৮ জনই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আকতারের স্বজন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়ির রান্নাঘরও এডিপি’র অর্থায়নে বরাদ্দ টিন। এমন অনিয়মকে অধিকার বলে দাবিও করেছেন ওই ভাইস চেয়ারম্যান।

এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের এ ঢেউটিন বিতরণ বিধিসম্মত নয় জানিয়ে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) থেকে পিআইসি কমিটির মাধ্যমে ১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং দরপত্র ও রেট ফর কোটেশন'র (আরএফকিউ) মাধ্যমে ৫২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৬৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৩ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

দরপত্রের মাধ্যমে ৫২টি প্রকল্পের মধ্যে আরএফকিউ প্রকল্পের ৬টি, একটি সরাসরি ক্রয়, একটি ভাউচারমূলে এবং বাকিগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়া হয়। যার মধ্যে আরএফকিউ ও পিআইসি কমিটির প্রকল্প নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ।

উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) রোজিনা বেগম সম্পা প্রকল্প সভাপতি হিসেবে আরএফকিউ প্রকল্পের মাধ্যমে এক লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ জন নারীকে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। যার মাস্টার রোলে সুবিধাভোগীর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। বাকিগুলো মনগড়া ভাউচারে জায়েজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের অস্বচ্ছল পরিবারের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি আরএফকিউ প্রকল্প দেয়া হয়। এ প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে তা বাস্তবায়ন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) জেসমিন আকতার।

এ প্রকল্পে উপজেলার ১৩ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে সম্প্রতি ২৩ ব্যান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়। সেই অস্বচ্ছল পরিবারের তালিকায় ১৩ জনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নিজের পরিবারের ৮ জনের নাম দিয়েছেন। বাকিরাও তার স্বজন।

এদের মধ্যে মধ্যে রয়েছে, তার স্বামী রফিকুল ইসলাম, মা জিন্নাতুন নেছা, ভাই টিটু মিয়া ও মনিরুজ্জামান, ভাইয়ের বউ মুক্তা বেগম ও ফাতেমা বেগম, বোন পারভীন বেগম, খালাত ভাই লিটন মিয়ার নাম।

সরেজমিনে দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আকতারের দুই ভাই পৃথক পরিবারে থাকলেও মা জিন্নাতুন নেছা থাকেন ছোট ভাইয়ের সংসারে। সেখানে ছোট ভাই টিটু মিয়া বাড়ি পাকা করছেন। পাকা ঘরের ছাউনির টিনের জন্য বোন ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন তাদের পরিবারের ৭ জনের নাম দিয়ে ভাইকে ঢেউটিন উপহার দেন।

তাদের বাড়ির ছবি তুলতে গেলে ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তার নিজের নামে দুই ব্যান্ডিল ও স্ত্রী মুক্তার নামে এক ব্যান্ডিল টিন মিলে তার ঘরে পাওয়া যায় তিন ব্যান্ডিল টিন।

তবে টিন প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বোন আত্মসাৎ করেনি। আমাদের নাম দিয়েছেন এবং টিনও বিতরণ করেছেন। আমরা বিক্রি করিনাই, ঘরে লাগাবো।

ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিনের খালাত ভাই লিটন মিয়া প্রভাবশালী। বৈঠকখানাসহ চারদিকে বারান্দা দেয়া তার আলিসান বাড়ির বেড়া দিতে বোন ভাইস চেয়ারম্যান এ প্রকল্পের দুই ব্যান্ডিল টিন দিয়েছেন। তিনিও টিন পেয়ে বেশ খুশি।

তবে খুশি হতে পারেনি ভাইস চেয়ারম্যানের বাবার বাড়ির পাশের অস্বচ্ছল পরিবারের ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষগুলো। যাদের অনেকের ঘরের ছাউনি ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানিতে শরীর-বিছানা ভিজে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ভোটের সময় ফুসলিয়ে ভোট নিয়েছে। চেয়ারম্যান হয়ে ভাই-বোন ছাড়া কাউকে কোনো সহায়তা দেননি জেসমিন আকতার। এসব টিন কী সরকার পাকা বাড়ির মালিককে দেয়ার জন্য দিয়েছেন?

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) জেসমিন আকতার বলেন, পাকা বাড়ি হলেও রান্নাঘরের ছাউনি নষ্ট হয়েছে, তাই স্বামীর নামে টিন নিয়েছি। মা, বোন ও ভাইদের দিয়েছি। তাদের পাওয়ার অধিকার আছে। অস্বচ্ছলরা সরকারি সকব সুবিধা ভোগ করে। আমার বাবার বাড়ির লোকজন কিছুই পায় না। তাই তাদের মাত্র দুই ব্যান্ডিল করে ঢেউটিন দিয়েছি। আমার নির্বাচনে ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা আমাকে কে দেবে?

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, অস্বচ্ছলদের বঞ্চিত করে নিজের পরিবারের স্বচ্ছল এবং একই পরিবারে সরকারি ঢেউটিন বিতরণ বিধিসম্মত নয়। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত