ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

একাধিক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ায় শিক্ষক বহিস্কার

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২০, ১৩:৫২

একাধিক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ায় শিক্ষক বহিস্কার

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কোটালীপাড়া এস এন ইনষ্টিটিউশনের সাবের ও কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীকে উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে মিলন হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।

পাশাপাশি এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের তদন্তে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রতন মিত্রকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে এই তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বাহিস্কার হওয়া শিক্ষক মিলন হোসেন উপজেলার কোটালীপাড়া এস এন ইনষ্টিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী শিক্ষক।

জানা গেছে, উপজেলার কোটালীপাড়া এস এন ইনষ্টিটিউশনের শিক্ষক মিলন হোসেন ৮ বছর আগে বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকেই তিনি ছাত্রীদের উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন অভিযোগ ওঠে। একাধিক ছাত্রীকে উত্যক্ত ও অনৈকিত প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়টিতে একাধিকবার শালিস বৈঠক হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার (২৪ জুন) কলেজ পড়ুয়া ওই বিদ্যালয়টির এক সাবেক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি ওই ছাত্রী তার অভিভাবকদের জানায়। ওই ছাত্রীর অভিভাবক ঘটনাটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আতিকুজ্জামান বাদলকে জানান।

আতিকুজ্জামান বাদল গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের জরুরী সভা ডেকে শিক্ষক মিলন হোসেনকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করে। পরে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই সভা থেকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়েকে শিক্ষক মিলন দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানিয়েছি। শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা লাভ করবে। সেই শিক্ষকই যদি ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয় তাহলে আমরা এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে ভালো কি আশা করতে পারি।

এ বছর এসএসসি পাশ করা এক ছাত্রী বলেন, নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার কথা বলে স্যার মিলন হোসেন আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি বিষয়টি তখন কয়েকজন শিক্ষককে জানিয়েছিলাম। শিক্ষকগণ তখন মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাকে চেপে যেতে বলেছিলেন।

অভিভাবক সদস্য পারভীন বেগম বলেন, মিলন হোসেন যদি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থাকেন তাহলে অনেক অভিভাবকই তাদের মেয়েদের এই বিদ্যালয়ে পড়ানো বন্ধ করে দিবেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আতিকুজ্জামান বাদল বলেন, মিলন হোসেন এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই একাধিক ছাত্রীকে উত্যক্ত ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে বিদ্যালয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক হয়েছে। মিলন হোসেন মেধাবী শিক্ষক হওয়ার কারণে এতদিন তাকে বিদ্যালয়ে রেখেছি। তাকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সংশোধন হয়নি। তাই তাকে আমরা সাময়িকভাবে বহিস্কার করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যদি সে দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিবো।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রতন মিত্র বলেন, তদন্তে প্রাথমিকভাবে শিক্ষক মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) আমরা চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মিলন হোসেনের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষক সুলভ কোন আচরণ করেন না। এছাড়া তার বিষয়ে আমার আর বেশী কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মিলন হোসেন বলেন, ভালো শিক্ষক হিসেবে এলাকায় আমার একটি সুনাম রয়েছে। যে কারণে আমাকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে সেটি ষড়যন্ত্র।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের খারাপ লোক বিদ্যালয়ের রাখা ঠিক না। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত