ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

হলি আর্টিজানে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২০, ১৬:৫৬

হলি আর্টিজানে হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার চার বছর পূর্তিতে নিহত দেশী-বিদেশীদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই আজকের এই দিনে গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারীতে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশী-বিদেশী ২২ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হন।

বুধবার সকাল ১০টায় গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, নিহতদের পরিবারের স্বজন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‌্যাব।

এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার হলি আর্টিজানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না সাধারণ মানুষ। কেবল বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সংশ্লিষ্টদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। করোনার ঝুঁকি থাকায় বাইরের লোক সমাগমের ব্যবস্থা এবার রাখা যাচ্ছে না।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে র‍্যাবের ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে জঙ্গি কার্যক্রম যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যে সফলতা অর্জন করেছি, সেই সফলতাকে ধরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল ইউনিট একযোগে কাজ করছি।

জঙ্গি কার্যক্রম আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তার করছে র‌্যাব। জঙ্গিরা যখনই কোনো পরিকল্পনা করছে আমরা তখনই গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী তাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস হামলার চতুর্থ বাষিকী আজ। ২০১৬ সালের (১ জুলাই) এই দিনে অস্ত্রধারী জঙ্গিরা রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে। সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিদের জিম্মি করে এবং পরে তাদের মধ্যে ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২০১৬ সালের এই দিনে হলি আটিজান বেকারিতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে তা ছিল কাপুরুষোচিত। এই ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। নিহতদের স্বজনরা যাতে এই শোক বইতে পারেন সেজন্য তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার আগে থেকেই আমরা দেশের জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছি। এখন পর্যন্ত র‌্যাব ২ হাজারেরও অধিক জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।’

হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় নিহত ও পরিকল্পনাকারীসহ জঙ্গি সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে চার্জশিট আদালতে জমাও দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই এর বিচার সম্পন্ন হবে। জঙ্গিবাদ দমনে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিসহ সকলেই সকল পর্যায়ের মানুষ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে এর জন্য সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এর পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে সারাবিশ্ব জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কাজ করছে। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম সফলভাবে আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এই সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিসান হামলার পর আমরা একের পর এক জঙ্গি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছি। জঙ্গিদের সক্ষমতা যে পর্যায়ে ছিল সেটি এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। ইমপ্রভাইড বোমা বানানোর মত এক্সপার্ট এখন আর নাই। তারা কেউ জেলে আছে অথবা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। তাদের ছোটখাটো সক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা নেই।

হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা ছিল উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার আজ তার ৪ বছর পুর্তি হলো। আমরা এই জঙ্গি হামলায় নিহত আমাদের দুইজন সহকর্মী ও দেশী-বিদেশী নিহত নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। যারা সরাসরি এই ঘটনায় জড়িত ছিল তারা সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘটনাস্থলে নিহত হন। এই পুরো ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিল পরবর্তী সময়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করি এবং সবারই সাজা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন আদালতে আপিল করেছে। তবে এখন আপিলের শুনানি শুরু হয়নি।

ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, হলি আর্টিসানের ঘটনার পরে বাংলাদেশ পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। একই ভাবে যারা জঙ্গিবাদে জড়িত তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের একটি পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়েছিল।

সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে আশ্বস্ত করে কমিশনার বলেন, করোনাকালে স্বাভাবিকভাবে মানুষ বাসায় বেশি থাকে। তারা অনেকেই ধর্মীয় সাইটগুলোতে বেশি ভিজিট করছে। এই সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। কাউকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে বা জঙ্গিবাদের কার্যক্রমকে পরিচালনার জন্য যে ধরণের সাংগঠনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন সেধরণের কোন সংগঠন আবার গড়ে তুলতে পেড়েছে সেরকম কোন তথ্য আমাদের কাছে নাই।

এ সময় র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারীতে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশী-বিদেশী ২২ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হন। এই সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে অকালে আত্মত্যাগ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই নির্ভীক কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সালাহ উদ্দিন খান। সেদিন ছিল শুক্রবার। রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল উপস্থিত সাধারণ মানুষের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সেদিন হলি আর্টিসান বেকারির ভেতরে হামলাকারীদের নৃশংসতার বলি হয় দেশী-বিদেশী মোট ২০ জন নাগরিক। রাতভর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযানে উদ্ধার হওয়া জীবিত ৩২ জন। যার মধ্যে প্রথমে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয় ২ জন বিদেশীসহ ১৯ জন, এরপর সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয় দেশী বিদেশী মোট ১৩ জন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত