ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

গ্রাম পুলিশের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২০, ১২:৩০

গ্রাম পুলিশের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না
ফাইল ছবি

গ্রাম পুলিশ বাহিনীর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। কবে শেষ হবে তাও জানে না তারা। এক যুগ ধরে অপেক্ষায় আছেন জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভূক্ত হবেন। বাড়বে বেতন-ভাতাদি। পরিবর্তন আসবে নিজেদের জীবনমানে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় সর্বশেষ তারা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের।

আদালতের রায়ে গ্রাম পুলিশের মহল্লাদারগনকে জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেডে এবং দফাদারদেরকে ১৯তম গ্রেডে বেতন-ভাতাদি প্রদানের জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দেয়া পূর্ণাঙ্গ এ রায় সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, মহল্লাদার এবং দফাদারগণ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রজাতন্ত্রের ৭০ প্রকার কর্মে নিয়োজিত। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কাকে বলে, তা এরা জানে না। এরা সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েও জনগণকে বেশি সেবা প্রদানকারী সরকারি কর্মচারী। প্রজাতন্ত্রের সহজ, সরল ও নিরহংকারী কর্মচারীর প্রতীক হচ্ছেন গ্রাম পুলিশের এই দফাদার ও মহল্লাদারগণ। কিন্তু এতগুলো সরকারি কর্মে নিয়োজিত থাকার পরেও এদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেহেতু এরা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সেহেতু সংবিধান মোতাবেক তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মরত সরকারি কর্মচারী। সেহেতু তারা অবশ্যই জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভূক্ত হবেন।

মহল্লাদার এবং দফাদারগণকে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা চেয়ে ২০১৭ সালে রিট করেন ৩৫৫জন গ্রাম পুলিশ সদস্য। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ডিসেম্বর মাসে রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই মাসেই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আদেশে বর্তমানে এই রায় স্থগিত আছে।

এদিকে সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পাওয়ায় এখন নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল দায়ের করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওই আপিলের শুনানি হবে। শুনানি শেষে যে রায় হবে সেটাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

গ্রাম পুলিশ বাহিনীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হমায়ুন কবির পল্লব বলেন, প্রশাসনিকভাবে সরকারি কর্মচারী হিসেবে না দেখানোয় তাদেরকে সামান্য পরিমাণ বেতন দেওয়া হত। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে জাতীয় বেতন-স্কেলে অন্তর্ভূক্ত হলে জীবন মানে পরিবর্তন আসবে বলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। এই স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক। কারন বর্তমানে একজন মহল্লাদার সাড়ে ছয় হাজার এবং একজন দফাদার মাত্র সাত হাজার টাকা পান। আর্থ সামাজিক বাস্তবতায় বর্তমানে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জীবনধারন করা অনেক কষ্টকর। হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়িত হলে তাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

প্রসঙ্গত, সরকার ও গ্রাম পুলিশের আলোচনার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ গ্রাম পুলিশ তথা দফাদার ও মহল্লাদারগনের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর সমস্কেল প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ওই বছরের আগস্ট মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজাদি অর্থ বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করে। পরবর্তীকালে স্থানীয় সরকার বিভাগ সকল মহল্লাদার ও দফাদারদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী গণ্য করে তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতির পদ্ধতি এবং তাদের বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন স্কেল-২০০৯ এর আলোকে নির্ধারণ করে ২০১১ সালের ২ জুন একটি বিধিমালা জারি করে। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকুরি বিধিমালা, ২০১১ জারির মধ্য দিয়ে সকল মহল্লাদার ও দফাদারগণ ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়ে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত হন। কিন্তু ওই বিধিমালা কার্যকর না করে চারবছর পর গ্রাম বাহিনীর গঠন ও চাকুরির শর্তাবলী বিষয়ে আরেকটি বিধিমালা জারি করে। এই বিধিমালাটি কেন জারি করা হয়েছিলো তা আদালতের কাছে বোধগম্য নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছে, ২০১১ সালের বিধিমালা কার্যকর না করে ২০১৫ প্রণয়ন বেআইনি ও এখতিয়ারবহির্ভূত।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র নিজের আইন নিজে মেনে চলবে। রাষ্ট্র কখনও নিজের প্রণীত আইন ও বিধি ভংগ করবে না। আইন সকলের জন্য সমান। রাষ্ট্র ও নাগরিকের কোন পার্থক্য নাই। আইন মোতাবেক চলা যেমনি নাগরিকের জন্য কর্তব্য তেমনি রাষ্ট্রের জন্যও তা সমভাবে প্রযোজ্য। এটাই আইনের শাসন। বর্তমান এই মামলায় গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের তার আইনত প্রাপ্যতা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে।

রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ মোতাবেক আইনানুযায়ী ব্যাতীত কোন ব্যক্তিকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে তথা ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে তথা ন্যায্য প্রত্যাশা থেকে তথা আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এই রিট মামলায় গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ন্যায্য অধিকার হল বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী বেতন ভাতাদি পাওয়া। কিন্তু তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছে। এতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে তাদের সঙ্গে বিবাদীরা আইনানুযায়ী আচরণ করে নাই। বিবাদীদের এমন কর্ম ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।

গ্রাম পুলিশ বাহিনী রিট বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি মো. উজ্জ্বল খান বলেন, আমরা যৎসামান্য বেতন পাই। আমাদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে। গ্রাম পুলিশ বাহিনীর ৪৭ হাজার সদস্যের পক্ষ থেকে অনুরোধ এই রায় বাস্তবায়নে সকলে আন্তরিক হোন। সূত্র: ইত্তেফাক

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত