ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩০ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে এমপি পদ বাতিল: প্রধানমন্ত্রী

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২০, ১২:৫০  
আপডেট :
 ০৮ জুলাই ২০২০, ১৭:৪২

পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে এমপি পদ বাতিল: প্রধানমন্ত্রী

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে তার এমপি পদ বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা বলেন। পাপুল বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

পাপুল সম্পর্কে তিনি বলেন, যে সংসদ সদস্যের কথা বলা হয়েছে সে কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। সে কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিল আমি দেইনি। সে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। নির্বাচন ওই সিট জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান নমিনেশন পেয়েছিল সে নির্বাচন করেনি ওই লোক জিতে আসে।

রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অনিয়মগুলো খুঁজে বের করেছি। ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওই হাসাপতালের এই তথ্য কিন্তু আগে কেউ দেয়নি, জানাতে পারেনি। অন্য কেউ জানায়নি।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকেই খুঁজে বের করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। র‌্যাব গেছে সেখানে, সেখান থেকে খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ফেরত না পাঠাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনায় বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য সরকার দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগ এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখছে যাতে তারা পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে আবার কাজ ফিরতে পারেন। তারপরও যদি কাউকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হয় তাদের জন্য ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করছে সরকার।

সরকার প্রধান জানান, প্রবাসীদের জন্য ২০০ কোটি টাকা তহবিল গঠন করা হয়েছে ওয়েজ আর্নাস কল্যান বোর্ডের মাধ্যমে। পুনর্বাসনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

‘শুধুমাত্র বৈধ ও নিবন্ধিত অভিবাসী মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে করোনায় মৃত্যুবরণকারী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আমরা ৩ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, এই অন্তর্বর্তী সময়ে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করেছি।

আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ফেরত না পাঠাতে বিভিন্ন দেশে চিঠি: প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, বিমান চলাচলের অনুমতির বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কুটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে আমি কতিপয় রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধানের নিকট এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করেছি। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের সরকারের গৃহীত খাদ্য ও চিকিৎসা কূটনীতির আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি এবং ওষুধ পাঠানো হয়েছে।

সরকার প্রধান আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশি অন্যান্য দেশসমূহে যেখানে প্রায় লক্ষাধিক প্রবাসী শ্রমিক ফিরে এসেছেন, সেখানে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত সময়োচিত কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ফিরে আসা প্রবাসীর সংখ্যা এখনও কম রয়েছে। আমাদের সরকার ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রবাসীদের যথাযথ সহায়তা প্রদানের জন্য একটি ডাটাবেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া যারা পুনরায় বিদেশে যেতে সক্ষম তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রবাসীদের বিদেশে চাকরি ধরে রাখা, নতুন নতুন প্রফেশনে যোগদান, কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ এবং এন্টারপ্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি ফান্ড’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এই ফান্ডটি হবে ‘ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড’ ও ‘ক্লাইমেট রেসিলেন্স ফান্ড’ এর অনুরূপ।

‘বাবা বলতেন এখন খাতাটা পড়বি না’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখার খাতার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাগারে কী ধরনের যন্ত্রণায় থাকতেন, তা বাইরে বলতেন না। যা জানতে পেরেছেন, লেখা থেকেই জেনেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে তাঁদের বাসা শুধু আক্রমণই করেনি, দীর্ঘ নয় মাস লুটপাট করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সবকিছু লুট হয়ে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর লেখার খাতাগুলো কেউ নেয়নি। মনে হয় তাদের পছন্দ হয়নি। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বাড়িও লুট হয়। এরপরও তিনি খাতাগুলো উদ্ধার করেছেন।

বাবার লেখা খাতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে চোখ মোছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাবা যখন কুর্মিটোলা কারাগারে, ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন, তখন মা সব সময় একটা খাতা দিয়ে আসতেন লিখে রাখার জন্য। আমি গেলে আমাকে বাবা লেখা খাতাটা দিয়ে দিতেন। বলতেন, এখন খাতাটা পড়বি না। যখন আমি থাকব না, তখন পড়িস। এরপর আর খাতাগুলো ধরিনি।

বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাজীবনের কষ্ট–যন্ত্রণা কিচ্ছু বলেননি আব্বা। যতটুকু জেনেছি এই লেখা পড়ে। তিনি নিজে থেকে বলতে চাইতেন না। রেহানাকে (শেখ রেহানা) জিজ্ঞেস করেছি, তুই কিছু শুনেছিস। ও ছোট ছিল, মাঝেমধ্যে আব্বার কাছে জানতে চাইত। সেদিনও ওকে জিজ্ঞেস করেছি। ও বলল, বাবা বলতেন, তোরা এগুলো জানলে সহ্য করতে পারবি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৫–৭৭ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডিক্লাসিফাউট ডকুমেন্ট পুরোটাই সংগ্রহ করা হয়েছে। এ থেকে হয়তো কিছু জানা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এগুলো হার্ডডিস্কে ছিল। এখন সেগুলো প্রিন্ট নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ধীরে ধীরে দেখছি।’

এর আগে জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন, এ বিষয়ে বই হতে পারে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংসদীয় রাজনীতি বিশ্বাস করতেন। পাকিস্তান আমলে সংসদের বিতর্কগুলো নিয়েও বই প্রকাশ করা যায়।

আরএ
  • সর্বশেষ
  • পঠিত