ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাত্রলীগের মিলাদ মাহফিলে ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত ৩০

  সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২০, ১৭:০৯

ছাত্রলীগের মিলাদ মাহফিলে ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত ৩০

সিরাজগঞ্জে সদ্য নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলে অতর্কিত হামলায় ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটেছে। সিরাজগঞ্জ সদর আসনের এমপি গ্রুপের অনুসারীরা এ হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে বড়পুল থেকে খেদন সর্দারের মোড় পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার জন্য দু’পক্ষ একে অপরকে দায়ী করছে।

সংঘর্ষে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামুলসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ ধীরে ধীরে পুরো এসএস রোডে ছড়িয়ে পড়ে। টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয় গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ৮টা পর্যন্তও শহরের দুটি পয়েন্টে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। শহরের দোকানপাট মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ জানান, জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে শহরের এসএস রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণ মিলাদ মাহফিল চলছিলো। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য, এ্যাড. বিমল কুমার দাসসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, মিলাদ মাহফিল চলাকালে স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে মিছিল সহকারে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে এসে হামলা চালায়। আমরা প্রতিরোধ করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষেও বেধে যায়।

তিনি আরও জানান, তাদের হামলায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নাঈম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেন তিনি। হামলাকারীরা শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী নয়, বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ছিলো।

অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবে মিল্লাত মুন্না বলেন, ওই মিছিলে আমি ছিলাম না। তখন আমি বাসায় অবস্থান করছিলাম। তবে আমি শুনেছি যে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে দোয়া মাহফিলে যোগ দেয়ার জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। আমরা প্রতিহত করতে গেলে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকসহ অন্তত ১৫/২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, সদ্য প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের রুহের মাগফেরাত কামনায় সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। আসর নামাজ শেষ না হতেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে কতিপয় উশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা গোন্ডগোল শুরু করে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেলে কর্মসূচি দ্রুত শেষ করে সিনিয়ন নেতারা দলীয় অফিস থেকে চলে আসি।

তিনি আরো বলেন, এনামুল হক বিজয়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমরাও গভীর শোকে শোকাহত। কিন্তু এ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাতের বিষয়টিও অনাঙ্খিত।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিতি থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য বলেন, এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল চলছিলো। সেখানে জেলার সভাপতিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবীব খোকার নেতৃত্বে দু’শত লোকজন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে হামলা চালায়। যে কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার বলেন, জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত স্মরণসভা চলাকালে একাংশের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার সময় তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। ক্রমশ তা শহরের মেছুয়া বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন টহল জোরদার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বিকেলে জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৫ জুলাই) সকালে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহত বিজয়ের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর গত ২৮ জুন মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নিহত এনামুল হক বিজয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত