ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

খামারিদের কপালে ভাঁজ

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২০, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ১৩ জুলাই ২০২০, ১৬:৫৬

খামারিদের কপালে ভাঁজ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা হালিম গাজী। বয়স প্রায় ৬৮। কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে চলতো সংসার। গতবার অন্যদের দেখাদেখি এবারের কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৬টি দেশি গরু মোটাতাজা করেছেন। বাজার থেকে ৬টি ছোট গরু কিনে ৮/১০ মাস লালন পালন করেছেন। কোন প্রকার রাসয়ানিক ওষুধ ব্যবহার না করেই জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে সোনাখালী বিলের ঘাষের সাথে খড় আর ভুসি খাইয়ে মোটাতাজা করেছেন। ইতিমধ্যে হাটে বিক্রি করারও উপযুক্ত হয়েছে গরুগুলো।

কিন্তু এবার তার কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। করোনার কারণে গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন কিনা সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে তার। গরু বিক্রি করতে না পারলে ধার-দেনা তো মিটাতেই পারেবেন না, সেইসাথে সংসার চালানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে তার। শুধু তিনিই নয়, এমন চিন্তা জেলা সাড়ে ৪ হাজার খামারির।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় রয়েছে সাড়ে ৪ হাজার খামারি। এবারের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে লাভের আশায় গোপালগঞ্জ জেলায় ৩৪ হাজার পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে খামারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে ২০ হাজার গরু ও ১৪ হাজার ছাগল ও ভেড়া লালন-পালন করে মোটাতাজা করা হয়েছে।

শুক্রবার ট্রালারে করে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সোনাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সোনাখালি গ্রামটি গড়ে উঠেছে সোনাখালি বিলের মধ্যে। নিন্ম আয়ের কৃষক পরিবারগুলো সামান্য মাটি কেটে ভিটা তৈরী করে সেখানে বসতি গড়েছেন কয়েক দশক আগে। বছরের প্রায় ৯ মাস এই গ্রামটি জলমগ্ন থাকে। শীত মৌসুমে একবার ফসল ফলে। তাই দশকের পর দশক ধরে এখানকার মানুষ গবাদিপশু পালন করে তাদের জীবিকা চালিয়ে আসছেন।

কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর জন্য গত প্রায় তিন দশক ধরে এই গ্রামবাসীরা গরু পালন করে আসছে। গ্রামটিতে বসবাস প্রায় ৫শ' পরিবারের। সকল পরিবারই বাড়ির আঙিনায় গরু পালন করেন। ৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত গরু পালন করেন এক একটি পরিবার। দেশি প্রজাতির ষাঁড় গরুর বাচ্চা অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে তারা সেগুলোকে পালন করেন। আর তাদের এই গরু পালনে প্রকৃতিও যেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিল ভরা অবারিত প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাস কৃষকেরা গরুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করেন। সঙ্গে সামান্য খইল-ভুসি। তাতেই চার মাসে গরুগুলো রিষ্ট পুষ্ট হয়ে ওঠে।

দেশি জাতের হওয়ায় এবং হরমন ইনজেকশন ব্যবহার না করায় পার্শ্ববর্তী জেলা বরিশাল ও বাগেরহাটের হাট ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন হাটেও এখানকার গরুর চাহিদা থাকে। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে কোন ক্রেতাই এখন পযর্ন্ত আসেনি।

এমনকি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ও দাদন নিয়ে এসব পশু পালন করেছে খামারিরা। করোনার প্রভাবে দফায় দফায় পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় এবার খমারিদের খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে করোনার কারণে এসব গবাদিপশু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে রয়েছে খামারিরা। কোরবানির ঈদে শেষ পযর্ন্ত গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন কিনা সেটা ভেবে লোকসানের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে খামারিদের। পাশাপাশি ভারতীয় গরু দেশে আসার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। ভারতীয় গরু দেশে আসলে লোকসান গুণতে হবে খামারিদের।

সোনাখালী গ্রামের মিলন গাজী ও মনিরুজ্জামান গাজী জানান, অধিক লাভের আশায় এবার গরু মোটাতাজা করেছি। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সবসময় আমাদের পাশে থাকায় এবার কোনো গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়নি। বিক্রি করে লাভের আশাও করেছিলাম। কিন্তু করোনা আসায় লাভ তো দূরের কথা, গরু বিক্রি করতে পারবো কিনা সেই চিন্তায় রয়েছি।

বিকাশ মন্ডল ও প্রভাস মন্ডল জানান, সোনাখালি গ্রামের শতভাগ পরিবার গরু পালন করে। খইল-ভুসি আর বিলের ঘাস খাইয়ে আমরা গরু পালন করি। কোন রাসায়নিক, ট্যাবলেট, হরমন ইনজেকশন ব্যবহার না করার কারণে সোনাখালির গরুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন পযর্ন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

সবুর গাজী বলেন, করোনার জন্য আমরা গরু বিক্রি করতে পারছি না। হাট-বাজারও বসেনি। ভুসির যে দাম তাতে বাঁচতে পারতেছি না। কোরবানিতে যদি বেচতে না পারি তাহলে মরণ ছাড়া আমাদের গতি নাই।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজিজ আল মামুন জানান, এ বছর জেলায় ৩৪ হাজার পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। কোন প্রকার ক্ষতিকারক ওষুধ ছাড়াই ঘাসের সাথে খড় ও ভুসি খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। গরু মোটাতাজা করতে কোন অপদ্রব্য ও ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এখানকার গরু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে এ বছর গোপালগঞ্জের খামারিদের একটু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে হাটগুলো ঠিকভাবে বসলে ও ভারতীয় গরু বাজারে না আসলে গোপালগঞ্জের খামারিরা লাভবান হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত