ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাঁধের স্বপ্ন বাদই দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২০, ১৫:০৮

বাঁধের স্বপ্ন বাদই দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ

হারুন আলী, মহির উদ্দিন ও আবুল কাসেম। এই তিন কৃষকের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামে। তাদের বাড়ির পাশেই তিস্তা নদী। বন্যা পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে।

তারা বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বাঁধ দেয়ার কথা বলে জনপ্রতিনিধিরা ভোট নিচ্ছে। ভোট চলে গেলে বাঁধের কথাও তারা ভুলে যায়। বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দিলে জনপ্রতিনিধিরা আধা কেজি চিড়া আর ১শ' গ্রাম গুড় নিয়ে আসে। ৩০ বছরেও আমরা বাঁধ পাইনি। তাই আপাতত আমরা বাঁধের স্বপ্ন বাদই দিয়েছি। নদী ভাঙন আর বন্যার সাথে যুদ্ধ করে আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।

একই এলাকার মহাসীন আলী নামক এক বৃদ্ধ বলেন, আমাদের অন্য স্থানে জমি নেই যে আমরা বাড়ি ভেঙে চলে যাবো। তাই আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের বাঁধ নির্মাণ করে দেয়া হোক।

লালমনিরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলাসহ বেশ কয়েকটি নদী। এই নদীগুলো প্রতি বছর জেলার হাজার হাজার পরিবারকে শুধু গৃহহীনই করে না, বন্যায় লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে।

প্রতিবছর জেলায় যে উন্নয়ন হয় তার বেশকিছু বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ ৩০ বছরে ধরে তিস্তার ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে এ জেলার মানুষ। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, তিস্তা নদী জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গোটা জেলার ৫ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় তিস্তা নদী। ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে একদিকে তিস্তা নদীর পানিতে জেলার লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে, অন্যদিকে পানি কমে গেলে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে প্রতি বছর হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে মানবেতন জীবন যাপন করে।

তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলার মানুষ তিস্তার বাম তীরে একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি তোলে। সেই দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজনীতির নতুন খেলায় ভোটের ব্যবসা শুরু করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই জনপ্রতিনিধিরা তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচনের পরেই তারা ভুলে যায় প্রতিশ্রুতি।

গত ৩০ বছরে অনেকেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নিমার্ণের দাবিটি পূরণ করতে পারেনি। উল্টো নানা সময় বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষের সাথে তামাশা করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। এমনটাই জানায় স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায়। এ উপজেলার ৬ ইউনিয়নের অনেক অংশই নদীগর্ভে চলে গেছে। তিস্তা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে জীবন ও জীবিকার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন।

দুই বছর আগে তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গণকমিটির ব্যনারের আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয় যুবকরা। তখন ওই আন্দোলনকে বন্ধ করতে একটি তথ্য প্রচার করা হয়। তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণে ৩৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই সময় আন্দোলনকারীদের এক প্রকার তোপের মুখেও রাখা হয়েছিলো। কিন্তু তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, এমন কোনো তথ্যেই নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। যৌক্তিক একটি আন্দোলনকে বন্ধ করতেই একটি গুজব প্রচার করা হয় মাত্র।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের সাবেক সদস্য জাকির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন এলাকার অনেক উন্নয়ন করছেন। কিন্তু সেই উন্নয়ন তো তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। তাহলে উন্নয়ন করে লাভ কি?সবার আগে প্রয়োজন উন্নয়নকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। সেই ব্যবস্থা হলো তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ।

তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণ আন্দোলন গণকমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান সাজু বলেন, আন্দোলন ছাড়া কোনো কিছু আদায় সম্ভব নয়। আমরা তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের জন্য দাবি তুলে জনমত তৈরিতে আন্দোলন শুরু করলাম। তখনেই একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলো যে বাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, যা ছিলো সম্পূর্ণ গুজব। শুধু বাঁধ নয় প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনের সময় একটি মহল মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে গুজব ছড়াচ্ছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, তিস্তা নদী লালমনিরহাটের হাজার হাজার মানুষকে প্রতি বছর গৃহহীন করে। তিস্তা নদীর ভাঙনের কারণে জেলার মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন তিস্তা নদীর বাম তীরে বাঁধ নির্মাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করি আমরা দ্রুত বাঁধ নির্মাণের সুসংবাদ পাবো।

লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, তিস্তা নদীকে শাসন করে বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আমি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম তখন থেকেই মানুষের জন্য কাজ করে আসছি। মানুষের জন্য এই মুহূর্তে কি প্রয়োজন তা আমি ভালোভাবেই জানি। তিস্তা নদীর বাঁধ নির্মাণের জন্য আমার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সফলতা দেখতে পাবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত