ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেসব প্রেক্ষাপটে পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্যের ডিজি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২০, ১৭:৫৪

যেসব প্রেক্ষাপটে পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্যের ডিজি

মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নেয়া পদক্ষেপের কার্যকারিতা, কর্তৃপক্ষের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ, তথ্য লুকানোর অভিযোগের মত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করার পর আবারো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে সেই বিষয়গুলো।

মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এমন একটা সময় পদত্যাগ করলেন যখন করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নিয়ে জালিয়াতি করা রিজেন্ট হাসপাতাল কীভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার অনুমোদন পেয়েছিল, তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে বিতর্ক চলছে।

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ৭ জুলাই ঢাকায় রিজেন্ট হাসপাতালে র‍্যাবের অভিযানের পর বন্ধ করে দেয়া হয় হাসপাতাল।

রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হলে মন্ত্রী জানান যে, অধিদপ্তরের আমন্ত্রণেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে মহাপরিচালক দাবি করেছিলেন যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তারা চুক্তিটি করেছিলেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালে মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে, যেটিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদত্যাগের একটি কারণ হিসেবে মনে করছেন অনেকে।

তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের এই খবর প্রকাশিত হওয়ার আগেও বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও কার্যক্রম পরিচালনায় অস্বচ্ছতার বিষয়টি সামনে এসেছে।

মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা না করা, তথ্য গোপন করা থেকে শুরু করে নানারকম অভিযোগ ওঠে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

তবে কর্তৃপক্ষের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি প্রথমবার জনসমক্ষে প্রকাশিত হয় এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে, যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় আক্ষেপ করে বলেন যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে তৈরি করা জাতীয় কমিটির তিনি প্রধান হলেও সেই কমিটির নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি জানেন না।

সেসময় এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন যে, এই জাতীয় কমিটিতে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার কিছুই কমিটির চেয়ারম্যানকে জানানো হয় না।

এরপর দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত, ঈদে যাতায়াত করতে দেয়ার অনুমতির মত বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কমিটির সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ায় টেকনিক্যাল কমিটির সাথে সরকারের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ছিল বিভিন্ন মহলে।

এর পাশাপাশি মাস্ক নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে বদলি, আইইডিসিআরের কাছ থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার দায়িত্ব সরিয়ে নেয়ার মত ঘটনাগুলোও বেশ আলোচনার তৈরি করেছিল।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না পাওয়া, রোগী দেখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবহেলা, ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল এবং কিছু হাসপাতালের সরকারি নির্দেশনা না মানার অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয়, যা সেসময় সরকারকেও যথেষ্ট বিব্রত করেছিল।

এরকম প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ে যে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে তা কিছুটা অনুমেয় ছিল। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামকে বদলি করার মাধ্যমে শুরু হয় সেই পরিবর্তনের।

সচিবের বদলির সপ্তাহখানেকের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব এবং উপসচিবকেও বদলি করা হয়।

এরপর জুন মাসের মাঝামাঝি সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের করা একটি মন্তব্যের জবাবে সরকারের একজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের একজন নেতা নেতিবাচক মন্তব্য করায় প্রথমবার মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অসন্তুষ্টির আভাস পাওয়া যায়।

জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবুল কালাম আজাদ মন্তব্য করেছিলেন যে, বাংলাদেশে সংক্রমণ ‘দুই থেকে তিন বছর ধরে চলে পারে’, যেই মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ঐ ঘটনার কিছুদিন পরেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে এবং কীভাবে ঐ প্রতিষ্ঠান কোভিড পরীক্ষার অনুমোদন পেল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জেকেজি কেলেঙ্কারির ঘটনার কিছুদিন পরই রিজেন্ট হাসপাতালের জালিয়াতি আর কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসে, যেটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়।

রিজেন্ট হাসপাতাল এবং এর মালিক মো. সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ যখন ওঠে, তখন হাসপাতালটির লাইসেন্স না থাকার পরও এর সাথে সরকারের চুক্তি করার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

নানা প্রশ্ন এবং আলোচনার মুখে এক সংবাদবিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চুক্তিটি করা হয়েছিল।

এই বক্তব্যের ব্যাপারেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছিল।

কারণ দর্শানোর নোটিশের বিপরীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জবাব দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

অনেকে মনে করেন বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বারবার দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর সরকারের উপর মহল থেকে ক্রমশ চাপ বাড়ছিল, যার ধারাবাহিকতায় মহাপরিচালকের এই সিদ্ধান্ত। সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত