ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

হাবিপ্রবির জোড়া খুন: ৫ বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২০, ২১:১৩

হাবিপ্রবির জোড়া খুন: ৫ বছরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা
ফাইল ছবি

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। সন্তান হারানোর দীর্ঘ ৫ বছর হয়ে গেলেও এখনো খুনিদের বিচার না পেয়ে একপ্রকার মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনের মা-বাবা।

২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে ছাত্রলীগের অন্য অংশের সংর্ঘষ চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন।

এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে একটি ও দুই পরিবারের পক্ষ থেকে কোর্টে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে গেলে নিহত মিল্টনের মা ও জাকারিয়ার বাবাকে প্রধানমন্ত্রী বিচারের আশ্বাস দিলেও ধরা পড়েনি কোন সন্ত্রাসী।

মামলার অগ্রগতি বলতে গত ৫ বছরে একাধিকার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে এখন মামলাটি সিআইডিতে। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার একটিও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তদন্ত চলার কথা বলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চলে গেছে দীর্ঘ ৫ বছর।

নিহত ছাত্র জাকারিয়ার বাবা ও অপর ছাত্র মিল্টানের চাচা বাদী হয়ে পৃথক পৃথক দুই মামলায় হাবিপ্রবির সাবেক ভিসি প্রফেসর রুহুল আমিন, দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজব, কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত কুমার ঘোষ কা ন, হাবিপ্রবির সাবেক প্রক্টর এটিএম শফিকুল ইসলাম, কৃষি বনায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আল আমিন পলাশ, ছাত্র উপদেষ্টা শাহাদৎ হোসেন খান লিখন ও ভিসির গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলম, বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রায়হান, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান সিঙ্গেল, সাবেক শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেকিন রানা, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মিথুন, বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ জন ছাত্রসহ ৩৭ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছিল।

অন্য আরোও একটি হত্যা মামলায় প্রথম হত্যা মামলার সকল আসামিসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরোও ১৫/১৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনৈতিক দাপটের কারণে পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একাধিকারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের পরও দুই ছাত্র হত্যা মামলার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি কোতোয়ালি থানা পুলিশ। অবশেষে আদালতের এক আদেশে গত বছরের মার্চে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর সিআইডির ইন্সপেক্টর রমজান আলী বলেন, এ পর্যন্ত ১৮ জনের স্বাক্ষি গ্রহণ করা হয়েছে। এই হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদানের আগে আমাদের কেন্দ্রীয় সিআইডি অফিসে আবেদন করার প্রয়োজন হয়। তাই আমি আবেদন করেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি পাওয়ার পরই এই দুই ছাত্র হত্যা মামলার চূড়ান্ত পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একমাত্র সন্তান হত্যার বিচারের দাবিতে গিয়েছিলের নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা ও নিহত মিল্টনের মা রেবেকা সুলতানা। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী সন্তান হত্যার বিচারের আশ্বাসও দিয়েছিলেন বলে জানান জাকারিয়ার বাবা।

নিহত জাকারিয়ার বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচারের জন্য প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমি যেনো আমার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার দেখে মরতে পারি এই আশায় বেঁচে আছি। আমার বিশ্বাস, আমি মরার আগেই আমার সন্তান হত্যার বিচার পাব।

নিহত মিল্টনের মা রেবেকা সুলতানা বলেন, আমরা গরিব বলেই আমাদের সন্তান হত্যার বিচার এখনো পাইনি। আমাদের কোন বিচার নেই! আমি বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছি। আসামিরা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাউকেই আটক করা হয়নি। আর এখান বিচার চাইও না! বিচার চেয়েই আর লাভ কী?

এই দুই মেধাবী ছাত্র হত্যার মামলার কৌসুলী অতিরিক্ত পি পি এ্যাড. সাইফুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরের কোতয়ালী থানার সাবেক ওসি রেজাওয়ানুর রহিম ইচ্ছাকৃতভাবে এই জোড়া খুনের মামলার তদন্তকার্য বন্ধ করে রাখেন। সেই ক্ষমতাবান ওসি রেজওয়ানুর রহিম স্ট্যান্ড রিলিজের পর এই জোড়া খুনের বিচারের পথ কিছুটা হলেও আলোর পথ খুঁজে পেয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, এই জোড়া খুনের মামলার আশার সংবাদ হলো জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানহারা দুই পরিবারের বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তার মানে দাঁড়াল প্রধানমন্ত্রীর কথা শতভাগ বাস্তবায়ন হবে এটা আমার বিশ্বাস। তাই সিআইডির প্রতিবেদন আদালতে জমা হওয়ার সাথে সাথেই আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি জোড়া খুনের মামলার আমি উকিল হওয়ায় শতভাগ স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার পাবো বলে বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত