ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২০, ১৭:০১

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

গোপালগঞ্জে মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ।

জানা গেছে, জেলার মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার উলপুর, নিজড়া, হরিদাসপুর, কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা, হাতিয়াড়া, পুইশুর, মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এলাকার অন্তত ৪’শ পরিবার প্লাবিত এলাকার স্কুল ও পাকা সড়কের পাশে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ও আধা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে শত শত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ওই সব ঘের মালিকেরা নেট দিয়ে মাছ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মধুমতি নদী বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটর বেড়ে ২৮ সেন্টিমিটার ও মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের নীলমতি বিশ্বাস (৪২) ও ইতি বিশ্বাস (৪০) বিশ্বাস জানান, আমাদের ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে টং বানিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় দিনাতিপাত করছি।

কাশিয়ানী উপজেলার প্লাবিত এলাকার কেসিসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া দুখীরাম (৬৫), স্বরসতি রায় (৪৫) ও গৌরী রায় (৪৩) জানান, তাদের বাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় বসবাস করতে পাড়ছেন না। যার কারণে গবাদী পশু নিয়ে স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের রাহুথর ইউনিয়নের মাছের ঘের মালিক বাবুল রায় জানিয়েছেন, তার ঘেরসহ অসংখ্য মাছের ঘেরের পাড় পানিতে ডুবে গেছে। সবাই নেট দিয়ে ঘেরের মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব সরকার এবং গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান সরদার ও উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুল জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তারা আরো জানান, দুর্গত মানুষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র সরকার জানান, বন্যা কবলিত তিন উপজেলায় ১০ হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই সব উপজেলায় এক’শ করে প্লাস্টিকের পানির ক্যান দেয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মধুসদি ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। আমার প্রতিদিনই বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি। যেসব পরিবার পানিতে তলিয়ে গেছে তাদেরকে আশ্রায়ণ কেন্দ্রে যেতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে দূর্গতদের সাহায্যের জন্য ৩শ’ মেট্রিক টন চাল এবং শিশু, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবারের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দূর্গতদের ত্রাণ দেয়া শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে প্লাস্টিকের পানির ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগকে মেডিকেল টীম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দূর্গতদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন সমস্যায় ওই টীম কাজ করবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত