ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

৯ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ডকুমেন্ট গায়েব করেন সেই ওসি

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২০, ২২:২৬  
আপডেট :
 ১৩ আগস্ট ২০২০, ২২:৩৬

৯ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ডকুমেন্ট গায়েব করেন সেই ওসি

স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে এবার মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার ডকুমেন্টের স্ট্যাম্প গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের জন্য লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহানাজ বেগম নামে এক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী শাহানাজ বেগম লালমনিরহাট শহরের বিডিআরগেট খোচাবাড়ি এলাকার নবীয়ার হোসেনের স্ত্রী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান আলীর মেয়ে। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের রানিং বেয়ারা পদের কর্মচারী।

এর আগে লালমনিরহাট সদর থানা ওসি মাহফুজ আলম নিজ অফিস কক্ষে বসে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে “হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষ নেন ওসি মাহফুজ” শিরোনামে একটি সংবাদ বিভিন্ন গনমাধ্যমে ভিডিওসহ ফলাও করে প্রকাশ হয়। এরপর ওসি'র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এমনই একজন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম বিচার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, রেলওয়েতে চাকুরীর সুবাদে শাহানাজ বেগমের সাথে পরিচয় হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটের লস্কার তৈয়াবুর রহমান টিপুর। এরই সুবাদে তৈয়াবুর রহমান টিপু শাহানাজের ছেলে সোহানুর রহমান মিমকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকুরী নিয়ে দেয়ার কথা বলে কয়েক দফায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। টাকার প্রমান হিসেবে গত ২০১৫ সালের ১০ মে তারিখে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন তৈয়াবুর রহমান টিপু। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চাকুরী দিতে ব্যর্থ হলে সমুলে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তৈয়াবুর রহমান। সেই টাকা আজকাল করে কালবিলম্ব করায় স্ট্যাম্পমুলে মামলার প্রস্তুতি নেন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম।

বিষয়টি বুঝতে পেয়ে চাকুরীদাতা তৈয়াবুর রহমান সদর থানা ওসি মাহফুজ আলম ও সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে গত ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে শাহানাজের বাড়িতে যান। এসময় আপস মীমাংসার কথা বলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা প্রমাণের চুক্তিনামার স্ট্যাম্পটি খোদ ওসি মাহফুজ আলম হাতিয়ে নেন এবং তার স্বামী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে আসেন।

পরদিন শাহানাজের স্বামী ও ছেলেকে মামলায় জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আপসনামায় একটি এবং সাদা কাগজে একটি স্বাক্ষর নেন ওসি মাহফুজ আলম। এ বিষয়টি অন্য কাউকে জানালে পুনরায় স্বামী ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি শাহানাজ বেগম।

ওসি মাহফুজ আলমের হাতে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকার চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্প উদ্ধারপূর্বক চাকুরীদাতা প্রতারক তৈয়াবুর রহমানের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন শাহানাজ বেগম।

শাহানাজ বেগম বলেন, এক সঙ্গে চাকুরীর সুবাধে পরিচয় হলে তৈয়াবুর আমার ছেলেকে চাকুরী নিতে দিতে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। তৈয়াবুরের মোটা অংকের টাকার জোড়ে ওসি মাহফুজ আমার বাড়িতে এসে ড্রয়ার ভেঙ্গে স্ট্যাম্পগুলোসহ ছেলে ও স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। টাকা ছাড়াই আপসের কাগজে স্বাক্ষর করে ছেলে ও স্বামীকে ছাড়িয়ে আনি। তাদেরকে ছাড়তেও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান এসপি ভাল মানুষ তাই তার কাছে বিচার চেয়েছি।

এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ওসি মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা বলেন, অভিযোগ তো আজকেই দিয়েছেন। আমার হাতে পৌছুক। তারপরে দেখা যাবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত