ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ধরাছোঁয়ার বাইরে সাত মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি লিটন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২০, ২১:৩৫

ধরাছোঁয়ার বাইরে সাত মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি লিটন

এক ডজন মামলার আসামি প্রতারক লিটন এখনোও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তিন বছরেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, লিটনকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

সিকদার লিটন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত। এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিকদার লিটন। একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে দুই লাখ টাকা নেয় প্রতারক সিকদার লিটন। দুই বছরেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত পাননি ভুক্তভোগী নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন প্রতারক লিটনের কাছে ধরনা দিলেও টাকা তো দুরে থাক এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। ভুক্তভোগী নাজমুল গরু ও কিছু জমি বন্ধক রেখে লিটনকে টাকা দেয়। কিন্তু ২ বছরের তার চাকরি হয় না। বর্তমানে এই অসহায় যুবক দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

এদিকে চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সাইবার অপরাধসহ এক ডজনের মতো মামলার আসামি প্রতারক লিটনের পেছনে কারা কাজ করছে তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুরু হয়েছে তদন্ত। তবে অর্ধ ডজন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও একটি মামলায় সাজা হওয়া এই প্রতারককে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। বিভিন্ন সময় থানায় লিটনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজ পৌঁছালেও সবসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে গেছেন এই প্রতারক। এর ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।

ভুক্তভোগী নাজমুল বলেন, ‘চাকরি দেয়ার নামে প্রতারক সিকদার ২ লাখ টাকা নেয় তার কাছ থেকে। কিন্তু আড়াই বছর হয়ে গেলেও তাকে চাকরি কিংবা টাকা কোনোটাই ফেরত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) চাকরি দেওয়ার কথা বলে লিটন ২ লাখ টাকা নেয়। সরকারি চাকরির চিন্তা করেই টাকা দিয়েছিলাম। ভাবলাম যদি চাকরিটা হয় তাহলে আমার জন্য ভালো হয়। এখন ফোন দিলে উল্টাপাল্টা কথা বলে। আবার অনেক সময় কল দিলে ধরে না। ওর (লিটনের) সঙ্গে আরও কয়েকজন লোক আছে ওর গ্রামের। তারা মিলে আমার মতো আরো অনেকের টাকা মেরে দিয়েছে।’

‘লিটনের নামে কয়েকজনের কাছে অভিযোগ দিতে গিয়েছি, কেউ ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনে না। কারণ ওর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বললে ও (লিটন) সেগুলো রেকর্ড করে নেটে ছেড়ে দেয়। এজন্য কেউ কথা বলতে চায় না।’

নাজমুল আরো বলেন, ‘প্রতারক লিটন আলফাডাঙ্গা গ্রামে আসে না। আলফাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে শুনি ওর নামে আরো বহু অভিযোগ রয়েছে। আমাকে থানার ওসি বলল সে তো (লিটন) গ্রামে আসে না। আসলে আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’

‘প্রতারক লিটনের শশুরবাড়ির লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, সে এখন নড়াইলের লোহাগারায় থাকে। সেখানে নাকি একটি ওষুধ কোম্পানির কাজ করছে। মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়ি আসে কিন্তু গ্রামে আসে না।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও সম্মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ আছে সিকদার লিটন ও তার ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আকরাম হোসেন। যার নং- ৯৬। ফেসবুকে অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেনও সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই দুটো অভিযোগ তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছে পুলিশ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনা জেলায় সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে এসব মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ। মামলা নং-২৪। চাঁদা দাবি এবং প্রাণনাশের হুমকির অপরাধে এই মামলা করা হয়।

এছাড়া পাবনা জেলার আটঘরিয়ায় একটি সি.আর মামলার আসামিও সে। মামলার নং-৪৯/১৪। এই মামলাটি করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। পাবনার আমিনপুর থানাতেও করা প্রাণনাশের একটি মামলার আসামি লিটন। ২০১৪ সালের ১৮ মে মামলাটি করা হয়। অপকর্মের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৯ মে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানায়।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রতারক লিটনের বিরুদ্ধে আমার থানার ৭টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে । তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত