ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেভাবে ইউএনওর ওপর হামলা করেছিলো রবিউল

  সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৫৬  
আপডেট :
 ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২৭

যেভাবে ইউএনওর ওপর হামলা করেছিলো রবিউল

ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় মূল হামলাকারী তারই বাসভবনের মালি (বহিষ্কৃত) রবিউল ইমলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছেন তা একটি সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে!

রবিউল ইমলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে দায় স্বীকার করে ঘটনার বিবরণ দিয়েছে।

আরো পড়ুন: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার তদন্তের সাথে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। রবিউলের বক্তব্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার সবকিছুই যেন একসাথে মিলে যায়। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত এই ঘটনার সাথে একজনই জড়িত। তথ্য প্রমাণাদি বিশ্লেষণে এমন বিষয়টি দাবি করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তার দেয়া তথ্যমতে আলমারির চাবি, হাতুড়িসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: লঞ্চে নারীকে ধর্ষণের পর খুন, মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট রবিউল বলেছেন, একদিকে পারিবারিক অশান্তি, অন্যদিকে ইউএনও’র ১৬ হাজার টাকা চুরির অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত। সব মিলিয়ে মনের মধ্যে অনেক দিন ধরে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় ইউএনওকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। নিজস্ব পরিকল্পনা থেকেই গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) নিজ বাড়ি বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামের ধামাহার ভিমরুলপাড়া থেকে বিকাল ৪টার দিকে ঘোড়াঘাটের উদ্দেশ্যে বের হন।

আরো পড়ুন: ‘খিচুড়ি রান্না’ নিয়ে হৈচৈ করার কিছু নেই: গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে ঘোড়াঘাটে পৌঁছে যান রবিউল। তখন রাত সাড়ে ৯টা হবে। এরপর ঘোড়াঘাট বাজারের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে রাত যখন ১টা বাজে তখন ইউএনওর বাসর দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন ইউএনওর বাসভবনের চারদিক শুধুই নীরবতা।

আরো পড়ুন: ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলবে বিলাসবহুল ট্যুরিস্ট কোচ

জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল বলেন, ‘প্রথমে নৈশ্যপ্রহরী নাদিম হাসান পলাশের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তার কক্ষে ইউএনও’র বাসভবনের কেচিগেট ও মেইন গেটের তালার চাবি থাকে। পলাশের রুমে চাবি খুঁজতে থাকি। চাবি না পাওয়ায় পলাশের কক্ষ থেকে বের হয়ে পরিত্যক্ত কাঠ রাখার ঘরে কাছে গিয়ে একটা চেয়ার ও মই নিয়ে ইউএনও’র বেডরুমে ঢুকে হত্যার পরিকল্পনা করি।‘

আরো পড়ুন: মসজিদে বিস্ফোরণ: কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এলো সাপ!

‘সেই পরিকল্পনা অনুসারে একটা চেয়ার ও মই নিয়ে আসি। ভেন্টিলেটার দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার জন্য মই সেট করি। মই দিয়ে ওয়াল বেয়ে ভেন্টিলেটার খুলে ভুলবশত রুমে না গিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করি। বাথরুমে ঢুকে দেখা যায় দরজা বাহির থেকে আটকানো। তাই ইউএনও’র বেডরুমে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই বাথরুমেই প্রায় ১ থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করি, যদি ইউএনও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমে আসে তাহলে এখানেই তাকে ধরা হবে।’

আরো পড়ুন: ব্যবসায়ীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে, গ্রেপ্তার ৩

রবিউল বলেন, ‘এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাথরুমে অপেক্ষা করারও পরও যখন ইউএনও বাথরুমে আসেনি, তখন আবারও পরিকল্পনা পরিবর্তন করি। বাথরুম থেকে আবার ভেন্টিলেটার বেয়ে মই দিয়ে নিচে নেমে আসি। সেখানকার মই আর চেয়ার সেখানেই রাখি। এরপর আবারও পরিকল্পনা করি এবার ইউএনওর বেডরুমে ডুকতে হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউএনও’র বেডরুমের ভেন্টিলেটার বরাবর চেয়ার ও মই সেট করি। সেখানে আগেই একটা বাল্ব জ্বলছিলো, তা সুইচ চেপে বন্ধ করি। এরপর চেয়ার ও মই সেট করে ভেন্টিলেটার ইউএনও’র রুমে প্রবেশ করি।’

‘ভেন্টিলেটার দিয়ে রুমে প্রবেশ করায় ইউএনও টের পেয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় ইউএনও বলে, বাবা দেখোতো কোন বেয়াদব রুমে ডুকেছে। এই কথা বলে ইউএনও ওয়াহিদা খানম বিছানো থেকে ওঠার সাথে সাথে তাকে গালে ও মাথায় হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকি। এক পর্যায়ে বিছানোর পড়ে যায় ইউএনও। তার চিৎকারে পাশের রুম থেকে তার বাবা ওমর আলী শেখ এগিয়ে আসা মাত্রই তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেই। দরজার চৌকাঠের সাথে ধাক্কা লাগায় সেও পড়ে যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় আর সে উঠতে পারছিল না।’

আরো পড়ুন: শাহরুখের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছেন তাপসী পান্নু?

‘এক পর্যায়ে আলমারির চাবির কথা বললে ওমর আলী শেখ চাবি রাখার স্থান বলে দেয়। পরে চাবি হাতে নিয়ে আলমারি খোলার চেষ্টা করি, কিন্তু আর আলমারি খুলতে পারি না। এরই মধ্যে মনে হলো ফর্সা হতে যাচ্ছে বাইরে। তাই তাড়াতাড়ি করে তাদের ফেলে রেখে আবার ভেন্টিলেটার দিয়ে বের হয়ে আসি। চেয়ার আর মইটি পূর্বের স্থানে রেখে আবার প্রাচীর টপকে রাস্তা দিয়ে সোজা মহাসড়কে যাই। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দ্যেশে যাওয়া কোচে উঠে দিনাজপুরে চলে আসি। এরপর আমি আমার নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।’

রবিউল জানিয়েছে, গত ৪ মাস আগে ইউএনওর ব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি হয়। এই টাকা পরে তাকে ফেরত দিতে হয় ৫০ হাজার টাকায়। ওই সময় তার বিরুদ্ধে যাতে বিভাগীয় ব্যবস্থা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় সেজন্য অনুরোধ করেছিলেন ইউএনওকে। কিন্তু এরপরেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং বিভাগীয় মামলা করা হয়।

আরো পড়ুন: শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করালেন শিক্ষার্থী, ভিডিও ভাইরাল

এদিকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর তাকে ১৭ হাজার টাকা বেতনের স্থলে ৯ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছিল। যেটা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এছাড়া যে ৫০ হাজার টাকা ধার-কর্জ করে নেয়া হয়েছিল, সেটাও শোধ করতে পারছিল না রবিউল। এমন অবস্থায় ইউএনওর ওপর হামলার পরিকল্পনা করে সে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত