মরেও বেঁচে আছে ওরা
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৪৩
দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রয়েছে হাজারো দেশি-বিদেশি পশু-পাখির সম্ভার। জীবিত পাখি ও প্রাণী দর্শনার্থীদের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও মৃত প্রাণীও দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরতে কাজ শুরু করেছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কে বিভিন্ন কারণে মারা যাওয়া পশু-পাখি ট্যাক্সিডার্মিপূর্বক সংরক্ষণ করে তাকে স্থান দেয়া হচ্ছে 'ন্যাচারহিস্ট্রি মিউজিয়ামে'। মিউজিয়ামে রাখা বিভিন্ন প্রাণীর ট্যাক্সিডার্মি থেকে দর্শনার্থীরা এসব প্রাণীর বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারবেন। সেখানে বিভিন্ন পশু-পাখি মরে গেলেও জীবিতদের মতো সকল বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন জীবন্ত পশু-পাখির মতোই তারা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে বা শুয়ে আছে। মরেও যেন বেঁচে আছে ওরা।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমান সময়ে ট্যাক্সিডার্মি হলো শিল্প ও বিজ্ঞানের অনন্য সংমিশ্রণ যা বিলুপ্ত, বিপন্নপ্রায় প্রাণীকূলের পরিচিতি ও তথ্য জানতে দর্শনার্থীদের সাহায্য করবে।
সাধারণত গবেষণা ও পাঠদানের উদ্দেশ্যে মৃত প্রাণীকে ট্যাক্সিডার্মি করা হয়। মৃত প্রাণীর শরীরের মাংস ও নাড়িভুড়ি সরিয়ে (প্রধানত চামড়াকে) কেমিক্যাল ও ট্যানিংয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে তাকে জীবন্তের ন্যায় দেখানোর উপায়কে ট্যাক্সিডার্মি বলা হয়।
সাফারি পার্কের হাজারো প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্নভাবে প্রতিবছর বেশকিছু প্রাণী মারা যায়। এসব মারা যাওয়া প্রাণীকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর জন্য একজন ট্যাক্সিডার্মিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পার্কে ১৫টির অধিক প্রাণীর ট্যাক্সিডার্মি করা হয়েছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে ময়ূর, বিদেশি হাঁস ও নানা প্রজাতির বিলুপ্ত ও বিপন্ন বন্যপাখি।
পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাক্সিডার্মিস্ট পঙ্কজ চন্দ্র পাল জানান, মৃত প্রাণীগুলোর বিশেষ পদ্ধতিতে তার শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অংশ সরিয়ে নেয়া হয়। পরে রাসায়নিক দিয়ে শুকিয়ে তাতে তুলা ও তার দিয়ে ঠিক জীবিতের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। একটি প্রাণী ট্যাক্সিডার্মি করতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। নিখুঁতভাবে কাজ করতে অনেকটা শ্রম দিতে হয়।
তিনি আরো জানান, স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপসহ অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীর ওপর ট্যাক্সিডার্মি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়াও বড় আকারের কীটপতঙ্গের ওপরও ট্যাক্সিডার্মি প্রয়োগ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, অনেকেই শখের বশে পোষা প্রাণীসহ বিভিন্ন প্রাণীকে ট্যাক্সিডার্মি করে শো-পিচ হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ বন বিভাগ বিলুপ্ত ও বিপন্ন বন্যপ্রাণীর ট্যাক্সিডার্মি করে আসছে বেশ কয়েকবছর পূর্ব থেকেই। এরই ধারাবাহিকতায় সাফারি পার্কে মৃত বিভিন্ন প্রাণীর ট্যাক্সিডার্মি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব প্রাণী পার্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে স্থান দিয়ে দর্শনার্থীদের পাখি-প্রাণীর বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। সর্বোপরি এটি একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া। সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ন্যাচারহিস্ট্রি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে বনবিভাগের বহু দেশি বিদেশি প্রাণীর ট্যাক্সিডার্মি রয়েছে। বর্তমানে পার্কের নিজস্বভাবে ট্যাক্সিডার্মি শুরু হওয়ায় এর পরিধি বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে