ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত হলো

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৫৪  
আপডেট :
 ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৪২

বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত হলো

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫০তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। দুই দেশের এই সম্মেলনে বরাবরের মতো এবারেও আলোচনার শীর্ষে ছিল সীমান্ত হত্যার বিষয়।

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও মাদক চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিজিবি ও বিএসএফ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুনরায় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এর বাইরেও সীমান্ত সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সর্বমোট ১৪টি সিদ্ধান্তের বিষয় জানানো হয়। নির্ধারিত আলোচনার বাইরে যেকোনো বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছে, যার মাধ্যমে এবারের সম্মেলনকে সফল বলে আখ্যায়িত করেছেন দু’পক্ষ।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত চার দিনব্যপী এবারের সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বিএসএফের তরফ থেকে অংশ নেয় রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল।

সম্মেলনে যেসব উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হয়েছে

সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিক হত্যা/আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানো, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরো বেগবান করা এবং প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছেন।

সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় নাগরিকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে আক্রমণ-হামলার ঘটনাও শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছেন।

সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য বিশেষ করে অধিকতর তদন্তের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ পরস্পরের মধ্যে শেয়ার করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছেন।

মানবপাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা প্রতিরাধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হন। উভয় মহাপরিচালক যার যার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানবপাচারে ক্ষতিগ্রস্থদের যত দ্রুত সম্ভব তাদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের সুবিধার্থে সহায়তা করতেও সম্মত হয়েছেন।

উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সীমানার কাঁটাতারের বেড়া কেটে অপসারণ করা বা বেড়ার ক্ষয়ক্ষতি রোধে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং নিয়মিত যৌথ টহল চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন।

অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম করা থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছেন এবং একইসঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের জোরপূর্বক পুশ-ইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের জাতীয়তা যাচাই করতে এবং একে অপরের সহযোগিতায় হস্তান্তর বা গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ধ্বংস করতে বিজিবির অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

বিজিবি মহাপরিচালকও আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কোনো ক্যাম্প বা আন্তানা নেই। বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিশেষ করে ভারতের কোনো শত্রু পক্ষকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। তিনি এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

উভয় পক্ষ সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ ও জালমুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। সীমান্ত চোরাচালানী দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং উভয় বাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদন বিনিময়ের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।

সম্মেলন শেষে আজই ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে বিএসএফ প্রতিনিধি দলের। সম্মেলনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি।

আরো পড়ুন

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন সমাপ্ত

‘সীমান্তে হত্যা বন্ধে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে’​

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শুরু​

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শুরু আজ

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত