ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘ফোনকল ম্যাজিক’-এ ধরা ওরা ৪ জন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৫

‘ফোনকল ম্যাজিক’-এ ধরা ওরা ৪ জন

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনার পর আত্মগোপনে ছিলেন মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামি। প্রথম ৩৮ ঘণ্টায় তাদের খোঁজ না মিললেও পরের ১৬ ঘণ্টায় ধরা পড়েন প্রধান আসামিসহ চারজন। আর তাদের ধরা পড়ার কাহিনী খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।

কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার মোবাইল ফোন নম্বর ট্র্যাক করেই বাকিদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে অভিযান-সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে ‘ফোনকল ম্যাজিক’। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের এক নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে বাকি চার আসামির অবস্থান শনাক্ত হয়। এরপর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলো ধর্ষক রাজন

তিনি বলেন, ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের তথ্য শুক্রবার রাতেই জানাজানি হয়। তাদের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। পরে শনিবার সকালে মামলা হয়। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে তিন ঘণ্টায় এক ছাত্রলীগ নেতার মোবাইল ফোনে অসংখ্য কল আসে। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তার নম্বর ট্র্যাক করে।

এর মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হলে একে একে ধরা পড়েন চার আসামি। সবার শেষে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে আসামি রবিউল হাসানকে (২৮) ধরা হয়।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা, গোয়েন্দা ও পুলিশের সমন্বিত অভিযানে তার অবস্থান শনাক্ত হয়। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে রবিউল গ্রেপ্তার হন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকার পথে পালিয়েছিলেন তিনি।

সিলেটের এমসি কলেজে যা ঘটেছে

হবিগঞ্জে রবিউলকে ধরার আধা ঘণ্টা আগে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার হন। র‍্যাব-৯-এর অভিযানে তিনি ধরা পড়েন। র‍্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার এএসপি ওবাইন রাখাইন বলেন, অভিযান অব্যাহত আছে। মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ায়।

এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে পলাতক আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে। আর সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেপ্তার হন প্রধান আসামি সাইফুর রহমান।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, এজাহারভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে ধরা হয়েছে। বাকি দুই আসামি তারেকুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ধর্ষিত তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়। এতে তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান এবং ওই নারীকে গণধর্ষণ করে।

সিগারেট কিনতে যাওয়াই কাল হলো

এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০-টি মডেলের একটি গাড়িও ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেছে। পরে ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে পাঠানো হয়।

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণীর শারিরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালে উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।

তিনি বলেন, গাইনি বিভাগের এক অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। তিনি শারিরিকভাবে অনেকটা সুস্থ রয়েছেন।

শনিবার সকালে নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর ও বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত