ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোটি টাকা নিয়ে সমিতির মালিক উধাও!

  ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৩

কোটি টাকা নিয়ে সমিতির মালিক উধাও!
মামা মইনুল হোসেন ও ভাগ্নে হালিম

ঢাকার ধামরাইয়ে রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মইনুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে আবদুল হালিম গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় এলাকার শত শত নিরীহ ও দরিদ্র গ্রাহক তাদের তিলে তিলে জমানো কষ্টার্জিত টাকার শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

গ্রাহকদের জমানো অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে হালিমের বাড়িতে গিয়ে কয়েকটি গরু নিয়ে যান গত কয়েকদিন আগে। ওই ঘটনায় চারজন গ্রাহকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন হালিমের বাবা মুক্তার আলী। এতে সাদেক আলী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই গ্রামে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ ধামরাই উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে 'রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতি' নামে একটি সমিতির নিবন্ধন দেয়া হয়, যার নম্বর ৫৬৫। এর সভাপতি হন কালামপুর বাজারের মুদি দোকানদার ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মোড়ারচর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে মইনুল ইসলাম। তিনি তার ভাগ্নে দেপাশাই গ্রামের আবদুল হালিমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার কালামপুর, দেপাশাই, ভালুম, মোড়ারচর, কাশিপুর, বরাটিয়া, বাথুলী ও শৈলানসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষকে আমানতের ওপর অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।

এক পর্যায়ে দেপাশাই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের পাঁচ লাখ ৫০ হাজার, আবদুস সাত্তারের চার লাখ, শাহজাহানের এক লাখ, শরিফুল ও তার ভাই-বোনের ১৬ লাখ, ভানু বেগমের দুই লাখ, মাইনুদ্দিনের দুই লাখ, আবদুল মান্নানের এক লাখসহ কয়েক কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন মামা-ভাগ্নে।

অভিযোগ রয়েছে, আমানতের ওপর কয়েক মাস লাভ দিয়ে মানুষের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জনের এক পর্যায়ে তারা নিজেরা হয়ে যান কোটিপতি। তারা কালামপুর বাজারে তিনতলা আলিশান ভবন, আইঙ্গনে জমি, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও গাড়ি বাড়ির মালিক হয়ে যান।

গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে নানা হুমকি দিয়ে হঠাৎ এক রাতের মধ্যে উধাও হয়ে যান মামা-ভাগ্নে। ওই ঘটনায় প্রায় ১০ জন গ্রাহক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মামা-ভাগ্নের বিরুদ্ধে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এদিকে টাকার শোক সইতে না পেরে ওই সমিতির কয়েকজন গ্রাহক এক সপ্তাহ আগে আবদুল হালিমের ছয়টি গরু নিয়ে যান। এতে চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন হালিমের বাবা মুক্তার আলী। গরু ছয়টি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে দুটি গরু বহনকারী ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রাহক বলেন, স্ট্যাম্পে লিখিত স্বাক্ষর দিয়ে আমাদের লাখ লাখ টাকা নিয়েছে রোজ সমবায় বহুমুখী সমিতির অংশীদার আবদুল হালিম। টাকা চাইলেই আমাদের মামলা হামলার ভয় দেখানো হতো। আমাদের টাকা আত্মসাৎ করে হালিম ও তার মামা মইনুল গা ঢাকা দিলেও হালিমের বাবা মুক্তার আলী উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।

ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত টাকাও আত্মসাৎ করলো। আবার আমাদের বিরুদ্ধেই উল্টো থানায় মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন হালিমের বাবা মুক্তার আলী। কারও টাকা দেয়ার ব্যবস্থা না করে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পারভীন আশরাফী বলেন, রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মইনুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে হালিম গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত