ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ধর্ষণের শহর সিলেট!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ২২:০৯  
আপডেট :
 ০৫ অক্টোবর ২০২০, ২২:১২

ধর্ষণের শহর সিলেট!
প্রতীকী ছবি

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনার পর গত দুইদিনে আরো কমপক্ষে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এভাবে ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন এর প্রতিবাদে মানবন্ধনসহ অন্যান্য কর্মসূচিও পালন করেছে। এ অবস্থায় অনেকের দাবি, সিলেট প্রশাসন আরো কিছুটা সচেতন ও তৎপর হলে এ ধরনের অনাকাঙিক্ষত ঘটনা কিছুটা হলেও কমে আসবে।

জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণ

নীরব, থমথমে সন্ধ্যা। স্বামীর সাথে একটি গাড়ি থেকে নেমে এলেন এক তরুণী। তারা একসাথে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন। এমসি কলেজের ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে ঘুরে এই দম্পতি শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সিলেটের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের গেটের সামনে এসে পৌঁছান। এখানে কিছুটা অন্ধকারে পাশাপাশি আশপাশে লোকজনের উপস্থিতি ছিলো না। এ অবস্থায় ওই দম্পতির সামনে এসে দাঁড়ায় একদল তরুণ। ওই দম্পতি তখন গাড়িতে করে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তরুণের দল তাদের গতিরোধ করে সাথে যা আছে তা দিতে বলেন। প্রায় নয়জনের মতো লোক ছিলো এই দলে। এমতাবস্থায় নিজেদের সাথে থাকা টাকা-মোবাইলসহ অন্যান্য দ্রবাদি ওই দলটির কাছে তুলে দেন তারা।

কিন্তু এসবে সন্তুষ্ট না হলে ওই তরুণের দল তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তার স্বামীর থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে তাকেও ধরে নিয়ে যায় হিংস্র যুবকের দল। তারা স্ত্রীকে আর স্বামীকে প্রথমে একটি ঘরে আটকে রাখে। এরপর তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করে কথিত ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। আর ওই তরুণী নারীকে গণধর্ষণ করে তিন-চারজন নেতা-কর্মী।

ঘণ্টাখানেক পর ওই নারীকে ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেয় তরুণের দল। তখন নিজের স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্বামী। রাতেই ঐ তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

এমসি কলেজের হোস্টেলের পাশের আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, রাতে বেশ কিছুক্ষণ ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। পরে একপর্যায়ে নারী কন্ঠের চিৎকার শুনতে পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে ছাত্রাবাস এলাকার ভেতরে প্রবেশ করেন।

সেসময় হোস্টেলের পাশের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কর্মচারীরা জড়ো হলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন তারা। সকালে এই ঘটনার প্রতিবাদে এমসি কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর থেকে কলেজের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে ও টিলাগড় এলাকাসহ আশেপাশের এলাকাতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে পুলিশ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া গাড়িটি উদ্ধার করে। এরই মধ্যে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী কর্তৃক বিবাহিত তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি বহিস্কার করা হয়েছে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে।

মামলার আসামীদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন: এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর, শাহ রনি, অর্জুন, মাহফুজ, রবিউল ও তারেক। তারা সবাই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।

এদিকে মালার আসামিরা কেউ ছাত্রলীগের কর্মী না বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিয়ান খান জয়। তিনি জানিয়েছেন, সিলেটের এমসি কলেজে ১২ বছর ধরে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। জয় বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সিলেটের তারা তো ছাত্রলীগের কোনো পদধারী নেতাকর্মী না। ওই কলেজে কমিটি নেই ১২ বছর। আমরা ধর্ষকের বিচার চাই। যারা অভিযুক্ত তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার। আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছেও তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি।

হোটেল বন্ধের পরেও কীভাবে কিছু শিক্ষার্থী হলে থেকে গেলেন তা সামনে আসতেই প্রশ্ন ওঠে কলেজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে। তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু এখনই না বললেও শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের সুপার ও পলিটিক্যাল সায়েন্সের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জীবন কৃষ্ণ আচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, আসলে হোস্টেল বন্ধ থাকলে আনঅফিসিয়ালি কিছু ছাত্র হোস্টেলে রয়ে গেছে। যারা টিউশনি করে এমন ছাত্ররা ছিল। তবে অভিযুক্তরা আমাদের কলেজের ছাত্র কি-না সেটা যাচাই-বাছাই করে জানাতে পারব।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা পিপিএম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান- রাত ৯টার দিকে তিন-চারজন মিলে এমসি কলেজ গেট থেকে ওই তরুণীকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় তার স্বামী বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করে তারা। পরে তাকে বালুচরস্থ কলেজ হোস্টেলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে অভিযুক্তদের। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।

সিলেটে কিশোরীকে ছাদে নিয়ে ধর্ষণ

সিলেটের দাড়িয়া পাড়া এলাকায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিম কিশোরীর মা বাদি হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, অভিযুক্ত নিজু আহমদ দাঁড়িয়াপাড়া ১৪/বি বাসার বাসিন্দা এবং মদন মোহন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিজু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে বাসায় এনে ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং পরের দিন তাড়িয়ে দেয়। পরে ওই কিশোরী ধর্ষণের বিষয়টি তার বাসায় জানায়।

বিষয়টি জানার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন। এরপর রাতে ওই কিশোরীর মা নিজু আহমদকে আসামী করে সিলেট কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৩ (০৩.১০.২০)।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি সেলিম মিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে জানান- শুক্রবার রাত সোয়া ১টায় ওই কিশোরীর মা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর থেকেই আসামি ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে মামলার পর রাতে ওসমানী মেডিকেলের ওসিসি ভর্তি কিশোরীকে দেখতে যান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ ও কোতয়ালী থানার ওসি সেলিম মিয়া।

সিলেটে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

সিলেটে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরীকে (১৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার চাতলপাড় গ্রাম থেকে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় হৃদয় আহমদ (১৬) নামের ওই অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হৃদয় আহমদ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রামের বিল্লাল মিয়ার ছেলে।

এর আগে রোববার (৪ অক্টোবর) ১১টার দিকে উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের চাতালপাড় (বিলাজুর) গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, তেলিখাল ইউনিয়নের চাতলপাড় (বিলাজুর) গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ৭ বছরের মেয়েকে বাড়িতে একা পেয়ে হৃদয় আহমদ জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও স্থানীয় জনগণ ও পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার কারণে পারেনি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সিলেটে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ

সিলেটে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকার ৪ নম্বর রোডের এক বাসায়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দিলওয়ার ও তার সহযোগী হারুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, শামীমাবাদ এলাকার ওই বাসায় স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন ওই নারী। গত শনিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাসার দ্বিতীয় তলার ভাড়াটে দিলওয়ার তার দুই সহযোগীকে নিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর ওই নারীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে রোববার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেটের লামাবাজার ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের দায়ে প্রধান অভিযুক্ত দিলওয়ার ও তার সহযোগী হারুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।

লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জে ধর্ষণ

সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে এক তরুণীকে (১৭) রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের জন্য ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এসময় ওই তরুণীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল রোববার বিকেলে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন।

উপজেলার বড়কান্দি গ্রামের ভুক্তভোগী ওই তরুণীর অভিযোগ, মাঝে মধ্যে সে বোনের বাড়ি একই উপজেলার দক্ষিণ সাঙ্গর গ্রামে বেড়াতে যেতো। এসময় ওই গ্রামের শাহাব উদ্দিনের ছেলে সজিব মিয়া (২২) তাকে উত্যক্ত করত। গেল কয়েকদিন আগে সে আবার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। শনিবার সন্ধ্যায় সজিব মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সজিব মিয়ার বাবা শাহাব উদ্দিন তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার ছেলে সজিব মিয়াকে বিয়ে করার জন্য জোর করা হয় ওই তরুণীকে। এতে রাজি না হওয়ায় বাবা-ছেলে মিলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে তরুণীকে ছেলের হাতে তুলে দিয়ে শাহাব উদ্দিন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রাতভর ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে সজিব।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি মো. এমরান হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা বিকেলে জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগী তরুণী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

আরো পড়ুন:

> তরুণীকে তুলে নিল বাবা, রাতভর ধর্ষণ করল ছেলে

> মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

> গোপালঞ্জে কিশোরী, সিলেটে শিশুসহ ৬ জন ধর্ষিত

> ৭ বছরের শিশুকে ১৬ বছরের কিশোরের ধর্ষণ!

> সিলেটে এবার বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত