ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

অপরিকল্পিত ফিশারির জলাবদ্ধতা

ফুলপুরে ৩ গ্রামের শতাধিক পরিবার দুর্ভোগ

  মো. মঈন উদ্দিন রায়হান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪৮  
আপডেট :
 ০৭ অক্টোবর ২০২০, ১৫:০৩

ফুলপুরে ৩ গ্রামের শতাধিক পরিবার দুর্ভোগ

অপরিকল্পিত ফিশারির জলাবদ্ধতায় ময়মনসিংহের ফুলপুরের রূপসী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সরকারি জমি দখল, প্রতিবন্ধকতায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে জলাবদ্ধতা নিরসন ও সরকারি জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।

ময়মনসিংহের ফুলপুর রূপসী ইউনিয়নের পাইকপাড়া, নগুয়া ও কুঁড়িপাড়া ৩টি গ্রাম। অপরিকল্পিত ফিশারির কারণে অতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া সরকারি জমি দখল করে গোয়াল ঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এতে এ গ্রামের মানুষেরা পড়েছে বেকায়দায়। মালামাল আনা-নেয়া, চলাচল, বয়স্ক-অসুস্থ রোগী, মসজিদে নামাজে আসা মুসল্লীদের পড়তে হয় বিপাকে।

কুঁড়িপাড়ার আব্দুল খালেক বলেন, ফিশারি দেয়ার কারণে বৃষ্টি হলেই পানি যেতে পারে না। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকে। অনেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না। দৈনন্দিন কাজ করা যায় না। মাটির রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। গৃহস্থালির মালামাল নিয়ে চলাচল করতে পারে না। মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারে না। বয়স্ক মানুষ ও অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষিজ শস্য বহনও কষ্টসাধ্য হওয়ায় চড়া মজুরি ও অধিক সময় চলে যায় এই জলাবদ্ধতায়।

পাশেই বাশাঁটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রভাবশালীদের অপরিকল্পিত ফিশারির প্রতিবন্ধকতায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কথা বলে প্রধান শিক্ষক সোমা বলেন, এ রাস্তার যে অবস্থা এই করোনার সময় না হয় স্কুল বন্ধ। তবু আমাকে স্কুলে যেতে হয়। কিন্তু স্কুল খুললে যাতায়াত সমস্যার কারণে তখন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অনেক বেশি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করবে এই পানি মেখে রোগ বালাই (চর্ম রোগ) হওয়ার চেয়ে স্কুলে না যাওয়াই ভালো। এ বিষয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন।

সহকারি শিক্ষক আব্দুল হালিম জানান, এ ফিশারির প্রতিবন্ধকতায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ফিশারি নির্মাণে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ নিয়ে ১০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলাকাবাসী আবেদন করলে কর্মকর্তা ১৬ আগস্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রূপসী ইউনিয়ন ভূমি কর্তৃপক্ষকে জানান।

১৪ সেপ্টেম্বর ফুলপুরের রূপসী ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুণ কুমার সাহা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদনে বলেন, রূপসী ইউনিয়নের কুঁড়িপাড়ার মৃত ছমির উদ্দিনের তিন ছেলে রফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান ও আব্দুর রশিদের ফিশারি নির্মাণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ৫০-৬০টি বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ড্রেন-নালা না থাকায় এলাকার শতশত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

মাজরাভুক্ত ফিশারির উত্তর পাশে একটি সরকারি হালট (দুই জমির মধ্যবর্তী খালি জায়গা) রয়েছে। হালটটি এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হতে পারে। স্থানীয়দের প্রভাবে হালটটি অবৈধভাবে দখল হওয়ায় তা উদ্ধারে জমি পরিমাপের জন্য সার্ভেয়ার চেয়ে প্রতিবেদন শেষ করেন।

বাশাঁটি গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, ফিশারির মালিকদের বার বার বলার পরেও কোন কাজ হয়নি। এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখেন না। এই ফিশারির জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি ও সরকারি হালট উদ্ধার করে পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী সমাধান চাই।

অনেক চেষ্টার করেও প্রভাব-আধিপত্যের কারণে ফিশারি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকের সাথে কোন কথা বলতে চাননি। বরং উল্টো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা জোর করে খাল খনন করছে।

এ নিয়ে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীতেশ চন্দ্র সরকারের সাথে কথা হলে তিনি এ অঞ্চলের অপরিকল্পিত ফিশারিজের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা হবে। আর সরকারি জমি ও হালট দখল মুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ঐ স্থানে তিনি নিজে পরিদর্শন করবেন বলেও আশ্বাস দেন।

সরকারি জমি উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসন দ্রুত স্থায়ী সমাধান করবে তবেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার।

আরো পড়ুন:

ভিয়েতনাম ফেরত ৪৭ জনের মুক্তিলাভ

বিদ্যুৎহীন ময়মনসিংহ বিভাগ

যৌতুকের দাবিতে নববধূ হত্যা

ভাণ্ডারিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু,আহত ৪

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত