ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

এখন কোথায় ঠাঁই নেবে ওরা?

  গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫৬

এখন কোথায় ঠাঁই নেবে ওরা?

পঞ্চম দফা বন্যার পানি কমার সঙ্গে দেখা দিয়েছে তিব্র নদী ভাঙন। এ বছর পরপর ৫ দফা বন্যায় গোবিন্দগঞ্জ-সাঘাটা উপজেলার সীমানা এলাকার বাঙ্গালী নদী বেষ্টিত রামনগর গ্রামের ১০০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

গত ৭ দিনে প্রায় ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে গেলেও নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। বন্যা আর ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো অনাহারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

অপরদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যার পানিতে জেলার ৭ উপজেলায় ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৫৫৫ হেক্টর শাকসবজি ও ১৮০ হেক্টর জমির মাস কালাই নিমজ্জিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে গত রাতেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মেনেকা বেগমের বসতবাড়ি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার রান্নাঘর নদীতে বিলীন হয়। পরে তার কান্নার শব্দে এলাকার লোকজন এসে শোয়ার ঘরটি উদ্ধার করে রাস্তার ওপর রাখে।

তার মতো আরও প্রায় ২০ জনের বসতভিটা, বৈদুতিক খুঁটি, আম-কাঁঠালের গাছসহ স্থাপনা গত দু’দিনে বাঙ্গালী নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে।

মেনেকা বেগম বলেন, নদীর তীব্র স্রোতে বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব, কি খাব কিছুই জানি না। এখন খোলা আকাশের নিচে আছি। কেউ আসেনি সাহায্য করতে।

একই গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, বন্যা আর ভাঙনে জীবন-সংসার শেষ। বর্গা নিয়ে কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে, সেই ধানও পানির নিচে। এরইমধ্যে গত রাতে নদীগর্ভে গেছে বসতভিটা। এখন কি করব? কোথায় যাব কিছুই জানি না।

গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, নদী ভাঙনে গত কয়েক বছরে একটি গ্রামের চার ভাগের ৩ ভাগ বিলীন হয়েছে। সরকারিভাবেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেই। আমাদের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হলে আমরা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেবো?

লিলি বেগম বলেন, দু’দিন থেকে কিছু খাইনি। অন্ন কি জিনিস পেটে গেল না। কেউ আসেও না খোঁজ নিতে। সবাই আসে ছবি তুলতে। একটু চিড়া-মুড়ি দিলেও তো আমরা দু’চারদিন খেয়ে বাঁচতে পারতাম।

কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, বাঙ্গালী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে অনেকবার প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। এখন আমাদের মরণ ছাড়া গতি নেই।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন বাড়লেও ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে জেলার ৭ উপজেলায় ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৫৫৫ হেক্টর শাকসবজি ও ১৮০ হেক্টর জমির মাস কালাই নিমজ্জিত হয়েছে। ফসলের ক্ষতির অর্থিক পরিমাণ পানি নেমে যাওয়ার পর জানানো যাবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যার্তদের জন্য নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং শিশু খাদ্য বাবদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গো-খাদ্য হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলার জন্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বিতরণ অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত