ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতায় ইন্টারনেট সেবায় ভোগান্তি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৯:৫৯

প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতায় ইন্টারনেট সেবায় ভোগান্তি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এবং ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। গ্রাহকদের এমন ভোগান্তির জন্য পরস্পরকে দুষছে সিটি কর্পোরেশন এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অভিযোগ, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। আর ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কোন প্রক্রিয়ার কথা জানাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করেই কেবল বা তার কেটে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকার বাসিন্দা ফারহানা মাহবুব অভিযোগ করেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে একদিকে সন্তানদের স্কুলের ক্লাস চলছে অনলাইনে। আর সেই সাথে নিজেকেও বাড়িতে থেকে অফিস করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের অংশ হিসেবে ঝুলন্ত তার কেটে দেয়ার কারণে এ পর্যন্ত চারবার ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে তাকে। প্রতিবারই একবার ইন্টারনেট সংযোগ চলে যাওয়ার পর এক থেকে দু’দিন পর পর সংযোগ এসেছে।

তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে সন্তানদের অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। দুই বাচ্চার ক্লাস একসাথে শুরু হলে ঝামেলা হয়ে যায়। একটি মোবাইল দিয়ে দু’জনের পক্ষে ক্লাশ করা সম্ভব হয় না। কারণ, ব্রডব্যান্ড না থাকায় মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করতে হয়। ওরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে। সেই সাথে নিজের অফিসের কাজও ব্যাহত হয় বলে জানান তিনি।

পরীবাগ এলাকার বাসিন্দা শুচিস্মিতা তিথি অভিযোগ করে বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার ইন্টারনেট সংযোগ পরিবর্তন করেছেন তিনি। কিন্তু এর পরও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাননি তিনি। পরে জানতে পেরেছেন যে, সিটি কর্পোরেশন থেকে একাধিকবার তার কেটে দেয়ার কারণে এ ধরণের সমস্যায় পড়েছেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে হানি তামিমা একই অভিযোগ করে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাশ করতে হচ্ছে তাকে। তবে তার কাটার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং স্লো স্পিডের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। দেখা যায় যে পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে ইন্টারনেট নেই। তখন ঝামেলায় পড়ে যাই।

গত ১০ আগস্ট ডিএসসিসি’র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ সিটিকে তারের জঞ্জালমুক্ত করার ঘোষণা দেন। এরপরেই ডিএসসিসি বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝুলে থাকা বাড়তি তার কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে অনেক জায়গায় তার কেটে ফেলার কাজ শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (আইএসপিএবি) এর পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমরা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে নই। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে যে বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের করে নিতে হবে। তবে ঢাকা শহরে এই ধরণের কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যার কারণে এই প্রতিবাদ।

তবে গ্রাহকদের এমন ভোগান্তির জন্য পরস্পরকে দুষছে সিটি কর্পোরেশন এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ডিএসসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের দাবি করে বলেন, মাথার উপর দিয়ে কেবল বা তার নেয়াটা এমনিতেই অবৈধ। অনেক বছর ধরে এটা চলে আসছে। আর এখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও উল্টো সেটার পক্ষেই সাফাই আসছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রায় সব অঞ্চলে কেবল কাটার কাজ চলছে। এর মধ্যে শান্তিনগর, ধানমন্ডি, সিটি কলেজ, নগরভবনের চারপাশ, ওয়ারী, মুগদা এলাকায় কেবল কাটা হয়েছে। বাকি এলাকাগুলোতেও কাটা হবে। অনুমতি নিতে হলে সিটি কর্পোরেশনের কাছে আবেদন করতে হবে। সেখানে কিছু শর্তের বিনিময়ে অনুমতি দেয়া হবে। যার মধ্যে অন্যতম শর্ত হবে, তার মাথার উপর ঝোলানো যাবে না, মাটির নিচে হতে হবে এবং সিটি কর্পোরেশনকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেভিনিউ দিতে হবে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক দাবি করেছেন, কর্তৃপক্ষ বা নীতিনির্ধারক যারা রয়েছেন তাদেরকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমাদেরকে কত জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিটিসিএল আমাদের লাইসেন্স দিয়েছে, সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে।

ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের সাথে বৈঠক করে মাথার উপরে থাকা কেবল গুলোর বিষয়ে সমাধানে এসেছে। যার কারণে উত্তর সিটিতে মেইন রোড গুলো থেকে কেবল সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাস্তা থেকেও সরিয়ে নেয়া হবে। তবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে বার বার চেষ্টা করেও বৈঠকের কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে জানান আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক।

মাথার উপর ঝুলে থাকা তার ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থায় সংযুক্ত করতে ভূগর্ভস্থ কমন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক-এনটিটিএন ব্যবস্থা করেছে সরকার। দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা দিতে ১০ বছর আগে লাইসেন্স পায় এবং কাজ শুরু করে। তবে এরপরও পুরো ঢাকা শহর এখনো এই নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি।

এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, শুধু মেইন রোডগুলোতে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। সবগুলো হাউজহোল্ডগুলোতে এই সুবিধা নেই। যার কারণে চাইলেও সব তার ভূগর্ভস্থ ভাবে নেয়া সম্ভব নয়। এই সমস্যার কারণে অনেক স্থাপনাই ইন্টারনেট সংযোগ সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এ বিষয়ে আইএসপিএবি’র পরিচালক নাজমুল করিম ভূঁইয়া জানান, বিটিসিএল বা সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা এখনো এনটিটিএন নেটওয়ার্কের কোন অফার আমরা পাই নাই। যেভাবে আমরা দিতে পারবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআর/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত