ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ওয়াসার পানি ৯০ ভাগ বিশুদ্ধ: এমডি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২৭  
আপডেট :
 ১৬ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩৫

ওয়াসার পানি ৯০ ভাগ বিশুদ্ধ

ওয়াসার মাধ্যমে ঢাকা শহরে যে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে তার ৯০ শতাংশ পানি বিশুদ্ধ বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

তিনি বলেন, ‘পাইপের মাধ্যমে সরবরাহের কারণে অনেক সময় পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাসা বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকি ও ছাদের ট্যাংকে ময়লা জমে পানি দূষিত হচ্ছে।’

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে ‘ঢাকা ওয়াসা’র গত ১০ বছরের অর্জন ও আগামী ৩ বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।

ওয়াসা এমডি বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা রাজধানীতে একটি জরিপ চালিয়েছে। সেই জরিপে দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পানি বাসা বাড়ির ট্যাংকি পরিষ্কার না করার কারণে দূষিত হয়েছে বা জীবাণু পাওয়া গেছে। আবার অনেক সময় পাইপ লাইনের মাধ্যমে দূষিত পানি ঢুকে গেছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে নানারকম কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’

বর্তমানে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা ২৪৫ থেকে ২৫০ কোটি লিটার। আর ওয়াসার উৎপাদন ও সরবরাহ ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯-১০ সালে ডিজিটাল ওয়াসা গড়ার লক্ষে আমরা কাজ শুরু করি। ১১ বছর পর আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যে অবস্থায় আমরা ছিলাম, তার চাইতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। আমাদের উৎপাদন প্রতিদিন ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। যা চাহিদার তুলনায় বেশি। দুই কোটি মানুষকে পানির সুবিধা দেয়া পাহাড় সমান কাজ।’

আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে এবং শতকরা ৩০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকা ওয়াসা কাজ করছে জানিয়ে এমডি তাকসিম বলেন, ‘২০১০ সালে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লসের পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ। বর্তমানে সিস্টেম লসের পরিমাণ ২০ শতাংশ যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। ঢাকা ওয়াসা যে ডিএমএ (ডিভিশন মিটার এরিয়া) সিস্টেম চালু করেছে তাতে ৫ থেকে ৭ পার্সেন্ট সিস্টেম লস রয়েছে। রাজধানীতে ১৪৪টি ডিএমএ এর মধ্যে ৬০টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৮৪টির বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।’

তিনি জানান, ‘২০০৯-১০ সালে ওয়াসার আয়-ব্যয়ের অনুপাত ছিল দশমিক ৯৫। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় হলে তার ৯৫ টাকা খরচ হয়ে যেত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে খরচ ৬৫ টাকা। ওয়াসা বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে খরচ করছে ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা।’

তাকসিম এ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরে মাত্র ২০ শতাংশ এলাকার পয়ঃব্যবস্থাপনা ঢাকা ওয়াসা সম্পন্ন করতে পারে। নগরীর পয়ঃশোধনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা ওয়াসা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। সে অনুযায়ী ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে শহরের শতভাগ পয়ঃসেবার আওতায় আনার জন্য ৫টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প চলমান রয়েছে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে।’

ওয়াসার এমডি বলেন, ‘ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা মূলত সাতটি সংস্থা করে থাকে। সেজন্য সমন্বনয়হীনতা লক্ষ করা যায়। তাই ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কাজটি সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশেও এটা সিটি কর্পোরেশনের কাছে থাকে। সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতার অভাব ছিল। এখন নিশ্চয়ই সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা অর্জন হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে আমরা এটিকে হস্তান্তর করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আসছি। একটি সংস্থা কাজ করলে কোনো দোষারোপ চাপানো বা সমন্বয়হীনতা আর থাকবে না। ঢাকা ওয়াসা এখন ডিজিটালি অপারেট করছে। ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকাবাসী উপকৃত হচ্ছেন। ই-বিলিং, ই-জিপি, পয়ঃসংযোগ, ই-নথি এবং ই-রিক্রুটমেন্ট করে ডিজিটাল ঢাকা ওয়াসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।’

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে কখনো জলাবদ্ধতা হয়নি। হয়েছে জলজট। এক থেকে ছয় ঘণ্টা জলজট হওয়ার পর পানি নেমে গেছে। যখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে তখনই সৃষ্টি হয়েছে জলজট। আমরা পাম্পিং করে পানি বের করে দিয়েছি।

করোনাকালীন সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় কেউ যখন বের হচ্ছিলো না তখনও ঢাকা ওয়াসা ননস্টপ সার্ভিস দিয়ে গেছে। একটি দিন নয় বরং একটি সময়ের জন্যও পানি বন্ধ করা হয়নি। এর বাইরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতেও যাতে ঢাকা ওয়াসা সফলতার সাথে এগিয়ে যায় সে লক্ষে কাজ করছে।’

সুপেয় পানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে ঢাকা ওয়াসা সর্বদা কাজ করে যাবে বলেও জানান তিনি।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের মেগা শহরগুলোর বস্তিতে পানি ব্যবস্থাপনা খুব একটা বৈধ নয় উল্লেখ করে ওয়াসার এমডি বলেন, ‘আমাদের মতো শহর যেমন নয়াদিল্লী, মুম্বাই, করাচি যারা মেগা সিটি, তাদের একটি অংশ বস্তিতে বসবাস করে। এই বস্তি এলাকায় পানি ব্যবস্থাপনা খুব একটা বৈধ না। কিন্তু ২০১২ সালে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ঢাকা শহরে যে বস্তিগুলো আছে সেগুলোকে আমরা বৈধ পানির আওতায় আনব এবং আমরা প্রায় ৭০ ভাগ বস্তি এলাকাকে বৈধ পানির আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা সেটাকে শতভাগ করতে চাই। ইন শা আল্লাহ আমরা এতে সফল হব।’

মিটার রিডিং দেখতে বাসায় বাসায় লোক পাঠাতে হবে না- এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চায় ওয়াসা। তাকসিম এ খান বলেন, ‘আমরা স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট করেছি এবং করছি। আমরা সে পথেই যাচ্ছি। মানুষের বাসায় যে মিটার সেটা মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে দেখে আসতে হয়। আমরা সেটাকে ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। যাতে মিটার রিডিংটা ওয়েবের মাধ্যমে পাই। তাহলে এটাই হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম ডিজিটাল মিটার রিডিং পদ্ধতি। ওয়েবের মাধ্যমে মিটার রিডিং আমাদের আশেপাশে কোনো শহরেই নেই। এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এটা হবে আমাদের বড় একটি অর্জন।’

ওয়াসার এমডি হিসেবে নানা বিতর্কের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তাকসিম খান বলেন, ‘গত দশ বছরে যে অর্জনটা হয়েছে, নিশ্চয়ই সরকার চায় সাফল্য। সাফল্য হয়েছে। এই আলোচনা-সমালোচনা কারণ হচ্ছে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগছে, আমাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা যাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে তারা সামগ্রিকভাবে এই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ/টিআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত