ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

লেবুতে ভাগ্য খুলেছে মনিরের

  মো. মঈন উদ্দিন রায়হান

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১১:০৫  
আপডেট :
 ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১১:১৫

লেবুতে ভাগ্য খুলেছে মনিরের

করোনায় বিশ্বব্যাপী মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ভাগ্য দুয়ার খুলেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের যুবক মনিরের। করোনাকালে লেবু চাষে ভালো ফলনে ভাগ্য খুলে গিয়েছে মনির হোসেন ও তার বৃদ্ধ বাবা রিপন মিয়ার। স্থানীয় বাজারে লেবু ও লেবুর কলম বিক্রি করেই পরিবারটি আয় করেছেন দশ লাখ টাকা।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গয়েশপুর জয়দরখালির রিপন মিয়া স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। মেয়ে বিয়ে দিয়েছে ৭ বছর আগে গফরগাঁও সদরে। ছেলের সখ বিদেশ গিয়ে আয় করবে। চেষ্টাও করেছিলো বেশ ক’বার। বারবার প্রতারণার খপ্পরে পড়ে খোয়াতে হয় অনেক টাকা। ফলে রিপন মিয়া চরম হতাশায় যখন ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তখন মনিরের মামা পরামর্শ দিলেন লেবু চাষ করতে।

গত ৩ বছর ধরে অল্প অল্প করে এখন প্রায় তিন একর জমিতে লেবু চাষ করলেও পরিবারটির হতাশা কাটছিল না কোনোভাবেই। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাস তাদের এই হতাশায় আশার আলো জাগিয়ে তোলে। এ সময় হঠাৎ করে লেবুর চাহিদা বাড়ায় ভাগ্য দুয়ার খুলে যায় পরিবারটির। মনির পরিবারের এমন সাফল্য দেখে আশপাশের অসংখ্য কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এই লেবু চাষে।

হাস্যোজ্জ্বল লেবু চাষী মনির হোসেন জানায়, বিদেশ যাওয়ার চিন্তা ভেস্তে যাওয়ার পর লেবু বাগান করি। ধীরে ধীরে লেবু বাগান থেকে বেশ সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এই করোনাকালীন সময়ে আট থেকে দশ লক্ষ টাকা আয় করেছি। তাতে পরিবারের সকলেই বেশ আনন্দিত। হতাশা কাটিয়ে পরিবারে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। প্রায় প্রতিদিনই লেবু ও চারা বিক্রি হয়। আমার এখন মাল্টার বাগান করার ইচ্ছা আছে। এ জমিতে মাল্টার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। যদি সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় তবে এমন বাগান আরো বড় আকারে করার স্বপ্ন রয়েছে মনিরের।

ছেলের সাফল্যের কথা বলে মনিরের বাবা রিপন মিয়া বলেন, লেবু চাষে আমাদের পরিবারে এখন সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমাদের চাষকৃত লেবু খুব ভালো জাতের। রস যেমন বিক্রিও বেশ ভালো। ঢাকার বাজারে দিতেই ভালো দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে এলাকার অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছেন লেবু চাষে। তারাও মনিরের কাছ থেকে চারা নিয়ে বাগান করছেন।

ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের সহকারি উদ্যান তত্ত্ববিদ রুহুল আমিন জানান, লেবু চাষে এখন সফলতার মুখ দেখছে মনির ও তার বাবা। তাদেরকে এখন মাল্টা চাষের ব্যাপারেও পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা লেবুর চাষাবাদ কলা-কৌশল ও এর রোগ বালাই সম্পর্কে মনিরকে সবসময় সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান জানান, লেবু চাষে গফরগাঁওয়ের মনির হোসেন এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। লেবু চাষ করে মনির পরিবারের মত অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে পারেন।

এ বছর জেলায় পনেরো’শ হেক্টর জমিতে লেবু চাষের লক্ষ্যমাত্রা আছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের সহায়তায় ও পরামর্শে বেকার মনির হোসেন স্বাবলম্বী হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কেবল করোনাকালেই নয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বছর জুড়েই লেবুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে আরো অনেকেই এই চাষে উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত