বাঙালিয়ানায় সেজেছে মণ্ডপ, চলছে পূজা
হাফছা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১২:২৩ আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১২:৪৮
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি মানুষকে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাগুলো দিয়েছে তার মধ্যে একটি হলো পরিবেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বিষয়টি মাথায় রেখে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা কমিটির মণ্ডপ।
বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীপূজার দিন সরেজমিনে দেখা যায়, বাঙালি বিষয়বস্তু মাথায় রেখে বাংলার ঐতিহ্য পাট, মৃৎশিল্প, বাঁশ ব্যবহার করে সাজানো হয়েছে মণ্ডপটি। পূজা মণ্ডপটির সাজসজ্জার প্রায় প্রত্যেকটি জিনিসই পচনশীল এবং তা পরিবেশের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়।
অন্যদিকে দুর্গা প্রতিমার সাজে রয়েছে বাঙালি আটপৌরে লাল শাড়ি। লক্ষ্মী প্রতিমা ও সরস্বতী প্রতিমাও সেজেছেন সবুজ-হলুদ আটপৌরে শাড়িতে। আলতা রাঙ্গা পা, শাখা ও সিঁদুরে।
সিলিংয়ে ঝুলছে কৃত্রিম সাদা কদম ফুল, রং বেরংয়ের ছোট ছোট মাটির সরা চিত্র, মাটির তৈরি ঘণ্টা। আরো রয়েছে চটের তৈরি ফুল, মাটির তৈরি হাতি, বাঁশের তৈরি কাঠামো। হোগলা পাটি ও কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে দেয়াল। তরুণ শিল্পীরা এই ভিন্নধর্মী এই কাজটি করেছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চারুকলার শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ চারুকলার শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, ‘উকিলপাড়ার এবারের এই ভিন্নধর্মী এ কাজটি অপূর্ব হয়েছে। যদিও এ কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম না, তবে সহপাঠীদের এ কাজে আমি অভিভূত। বাঙালির ঐতিহ্য যে অপরূপভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা অন্য কোথাও তেমন দেখা যায়না।’
জানা যায়, মূলত বৈশ্বিক পরিবেশের কথা মাথায় রাখার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট বিবেচনা করেও এ বাঙালি বিষয়বস্তুতে সাজানো হয়েছে মণ্ডপটি।
এদিকে এই উকিলপাড়ার অন্যান্য বছরের সবচেয়ে বড় যে আকর্ষণ থাকতো তা হলো বঙ্গবন্ধু সড়কে তৈরি বিশাল ফটক। যা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতেন। করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট বিবেচনা করে তা এ বছর তৈরি করা হয়নি।
উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মন্টু ভদ্র এ বিষয়ে বলেন, ‘এ বছর আমাদের বাজেট ৩ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আগের বছর যে ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতেন, তিনি এ বছর ২ হাজার টাকা দিচ্ছেন। আর পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আমরা কারো কাছে চাইতেও পারবো না। তাছাড়া যে টাকা আমরা সাজসজ্জা এবং উৎসবে খরচ করি সে টাকার কিছুটা এবার দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য খরচ করা হবে।’
তবে প্রশাসন থেকে এবার কড়া নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে মণ্ডপে ভিড় জমা না হয়, পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা থাকে, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। আর এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য কমিটির নিজস্ব ভলান্টিয়ার থাকবে বলে তারা জানায়।
এ বিষয়ে উকিল-পাড়া হোসিয়ারী পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এবছর ভিড় যাতে না হয়, সে বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখবো। প্রত্যেকের হাত স্যানিটাইজ করে আসতে হবে। একটু সময় বেশি লাগলেও মণ্ডপের ভিতরে যাতে ভিড় না হয়, তার দিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। মণ্ডপের বাইরে থেকেই ভক্তদের প্রণাম করার অনুরোধ জানাবো আমরা।’
আরো পড়ুন:
কালো জাদুর রাজধানী ভারতের ‘মায়ং’
বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে