‘আইয়ুব পাগলের’ দোয়া অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২০, ০২:৩৬
জন্ম পরিচয়হীন একজন ভিক্ষুকের (পাগল) দোয়ার অনুষ্টানে হাজার হাজার মানুষ। ‘মানুষ মানুষের জন্য’, মৃত্যুর পরে এটার প্রমাণ করেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ‘আইয়ুব পাগলা’। সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে আইয়ুব পাগলাকে নিয়ে পোষ্ট আর রাস্তার পাশে ছবিসহ পোষ্টারের মাঝে বোঝা যায় একজন পাগলের প্রতি মানুষের ভালবাসা কতটা বেশি হতে পারে। শুধু তাই না সাধারণ মানুষের আয়োজনে এই পাগলের জন্য দোয়া কামনায় হাজার হাজার মানুষকে দাওয়াতে করা হয় মজলিস।
রাতভর ঘুম জেগে নিজেদের উদ্যোগে রান্নার অয়োজন ছিলো অবাক করার মতো। মজলিসে ৩টি গরু ও ১টি খাসি মুসলমানদের জন্য আর হিন্দুদের জন্য ২টি খাসি দিয়ে আলাদা রান্না করা হয়েছিল।
মজলিসের উদ্ধোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি।
স্থানীয়রা জানান, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আইয়ুব পাগলা বলতেন ‘একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খাম। জন্ম কোথায় আর কি পরিচয় কেউ সঠিক বলতে পারে না। বয়স বাড়ার সাথে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেই আইয়ুব পাগলা চলতি বছরের ২০ সেপ্টেবর বিকেলে মারা যায়।
তবে তিনি রেখে গেছে অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ। আইয়ুবের মৃত্যুর খবরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষজন মর্মাহত হয়।
আইয়ুবকে উত্তরউল্ল্যা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। আইয়ুবের মৃত্যুর সঙ্গে কেউ কাফনের কাপড়, কেউ বাঁশ, কেউ আগরবাতি নিয়ে কবরস্থ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
মৃত্যুর পরে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে শোকবার্তার ব্যানার, পোস্টার বিভিন্নস্থানে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের ফেসবুকেও জায়গা করে নিয়েছে এই আইয়ুব পাগলা। আইয়ুব পাগলার জানাজার নামাজ আদায় করার পরতার আত্মার মাগফেরাতে দোয়া অনুষ্টানে জন্য মজলিস করার সিন্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে ৪০ দিন পরে (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সাঘাটার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে ‘আইয়ুব-এর মজলিস’ সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও এই মজলিসে অংশগ্রহণ করেন।
সাঘাটার উল্যা বাজার এলাকার কাপর ব্যবস্যায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, আইয়ুব পাগলা জন্ম কোথায় আর কিভাবে সাঘাটার উল্যাবাজারে এসেছিলেন এর সঠিক কোন তথ্য জানা না থাকলেও এখানে অনেক দিন বসবাস করত। তাই তার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালবাসা বেড়ে যায়।
সাঘাটার উল্ল্যাবাজার কলোনীর বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, আইয়ুব পাগলা কারো ক্ষতি করত না। ক্ষুধা লাগলে মানুষের কাছে খাবার চাইতো। সবাই ওকে ভালোবাসতো। হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত।
সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মাঝে মাঝে আইয়ুব পাগলা অদৃশ্য হয়ে যেত। ১০-২০ বিশ দিন কখন ওবা ১-২ মাস মাস পর আবারও আমাদের মাঝে হাজির হতো। এই পাগলের প্রতি হাজার হাজার মানুষের ভালবাসার প্রমাণ মিলেছে আজ তার মজলিসের চিত্র দেখে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদ ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি বলেন, আইয়ুবের জানাজার নামাজ আদায় করার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মজলিস করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার ‘আইয়ুব-এর মজলিস’ করা হল। পরপারে আইয়ুব যেন শান্তিতে থাকে সেই দোয়া করি। সবার হৃদয়ে আইয়ুব পাগলা বেঁচে থাক চিরকাল।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
অন্যরা যা পড়ছেন:
> চিড়িয়াখানায় বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ
> রাজধানীর বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৯ ইউনিট
> অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেবেন মেয়র আতিক
> কল্যাণপুর বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, দুইজন দগ্ধ