ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘জেলহত্যার নেপথ্যে কারা এটা সবার জানা দরকার’

  শেখ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১১:০৭  
আপডেট :
 ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩৫

‘জেলহত্যার নেপথ্যে কারা এটা সবার জানা দরকার’
ফাইল ছবি

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য। বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

সৈয়দা লিপি প্রথমে সিলেট এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে যুক্তরাজ্যে যান। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। স্বাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ তৌফিকুর রহমান

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়। জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের রায় কার্যকর প্রক্রিয়া কতদূর?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: যারা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যায় জড়িত ছিলো, তাদের অনেকেই ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলো। বেশি সংখ্যক আসামিই ছিলো একই। তার বাইরে কিছু ছিলো, কয়েকজনের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। অনেকেই দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুনের কারণে হয়তো অনেককেই দেশে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য হয়তো মুষ্টিমেয় কয়েকজনের বিচারের রায় কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে দুটি হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। এর নেপথ্যে ছিলো একই কারিগর, আবার যারা সামনে ছিলো তাদের বেশিরভাগই একই গোষ্ঠীর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের শাস্তির আওতায় পড়ে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডটা যাদের পরিল্পনায় হয়েছিলো, তারা কখনোই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিলো না। স্বাধীন বাংলাদেশকে কীভাবে ধ্বংস করা যায় তারা সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। পরবর্তীতে হত্যাকারীদের মাথায় এলো যুদ্ধকালীন নয় মাসে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চার নেতা যেভাবে সাংগঠনিক ক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দক্ষতার মাধ্যমে দেশ স্বাধীনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারা বেঁচে থাকলে হয়তো বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই কাজটিই আবারো করবেন। স্বাধীনতাবিরোধীরা সেই কাজটি দ্বিতীয় বার আর করতে চাননি।

এত বছর পরে এখন সময়ের দাবি এত বড় দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এখনো কেন কমিশন গঠন হচ্ছে না। এর নেপথ্যে কারা ছিলো? কয়েকজন সিপাহী বা জুনিয়র অফিসারদের দ্বারা তো এত বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব না। তারা হয়তো হুকুম কার্যকর করেছে, কিন্তু পরিকল্পনাটা কাদের ছিলো সেটা তো এখনো জানা যায়নি।

আপনি কি একটি কমিশন গঠনের দাবি করছেন?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: এটা শুধু আমার পরিবারের পক্ষের দাবি সেটা না, আমার মনে হয় বাংলাদেশের সকল বিবেকবান মানুষের দাবি এটা। এই ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিলো এটা সবার জানা দরকার।

আপনি যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের একজন আইন প্রণেতা, আপনারা কি সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: ছিয়ানব্বইতে আমাদের নেত্রী যখন সরকার গঠন করলো, তখন একটা কমিশন তৈরি করা হয়েছিলো। এখানে বেশ কিছু বিদেশি আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের পর এটা স্তিমিত হয়ে যায়।

এখন কি এটা নতুন করে শুরু করা যায়?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: সেটার চেষ্টা তো এখনো আছে। আমি যেমন আমার পিতাকে হারিয়েছি, তেমনি আমার নেত্রী পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন। কারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আছেন এই প্রশ্নটা উনার মনেও আছে।

বিষয়টি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: আমরা চাইবো যে একটা কমিশন হোক, এটার আসল ঘটনাটা বের হয়ে আসুক, জাতি জানুক। বর্তমান প্রজন্ম যারা আছে তারা জানুক।

অতীতে আমরা আমাদের ইতিহাস বিকৃত হতে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের পর ইতিহাস থেকে তাদের অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি জাতীয় চার নেতার যে অবদান রয়েছে সেগুলোকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আরো বিস্তৃতভাবে জানানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: ’৭৫ পরবর্তী সময়ে প্রায় ২১ বছর ধরে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। পাঠ্য বই কিংবা মিডিয়াতে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। স্বাধীনতার যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কারা কাজ করেছেন, কারা অস্থায়ী সরকার গঠনের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এগুলো কিন্তু কেউই জানতো না। এগুলো নিয়ে কথা বলা যেত না। ভুল ইতিহাস, ভুল তথ্য দিনের পর দিন মানুষের মাঝে ছড়ানো হয়েছে। একটি পুরো প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে সত্যিকারের ইতিহাসটা মানুষকে জানানোর জন্য। যে জাতি তার গর্বের ইতিহাস যত জানবে, সে জাতি তত আত্নপ্রত্যয়ী হবে, তত শক্তিশালী হবে। ভুল ইতিহাস জেনে ভুল পথে চললে কোনো দিনই সমৃদ্ধির দিকে যাওয়া সম্ভব না।

আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। আপনার কি মনে হয় না যে আপনাদের দলের মধ্যেই ইতিহাস চর্চাটা কমে গেছে?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: দলের ভেতরে ইতিহাস চর্চাটা কমে গেছে সেটি আমি বলবো না। দলের জন্য নিবেদিত নেতাকর্মী সারা দেশে ছড়ানো। তারা কিন্তু সঠিক ইতিহাসটিই প্রচার করে।

পাঠ্য বইয়ে এই বিষয়গুলি সমৃদ্ধ আকারে তুলে ধরার বিষয়ে আপনি কী মনে করছেন?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: সরকার এখন চেষ্টা করছে। প্রতিটি স্কুলে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মহান স্বাধীনতার স্তম্ভ নির্মাণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানেই আমাদের স্বাধীনতা, স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানবো, তখন আামরা স্বাধীনতার সত্যিকারের ইতিহাস জানবো। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কারা কারা নেপথ্যে ছিলেন তাদেরও জানা যাবে।

মহান স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পার হতে যাচ্ছে। আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। জাতীয় চার নেতার পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে এই সময়ে জাতীয় চার নেতার আদর্শ কিংবা দর্শনের প্রতিফলন কতটুকু হয়েছে?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: জাতীর জনক যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, জাতীয় চার নেতার স্বপ্নের কোনো পার্থক্য ছিলো না। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের মূল মন্ত্র নিয়েই তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা স্বপ্ন পূরণে অনেকটা সময় লেগেছে। অনেকটাই সফল হয়েছে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা, দৃঢ়তায়। এখনো উনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। আমাদের পিতাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।

জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি কমিটেড ছিলেন। বর্তমান সময়ের রাজনীতিবিদরা কি আগের মতো কমিটেড?

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি: আমাদের পিতারা সৌভাগ্যবান, তারা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেতে পেরেছেন যে নেতার প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা বা আস্থাটা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও তার নেত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস প্রমাণে পিছপা হতেন না। আমার ভাইয়ের মতো বাংলাদেশে বহু নেতাকর্মী আছে, হয়তো তাদের এপ্রোচটা একটু ভিন্ন, আউটলুকটা একটু ভিন্ন। আমি আমার ভাইয়ের উদাহরণ দিলাম। নেত্রীর প্রতি তাদের আস্থাটা রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত