ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাটগ্রামে হত্যাকাণ্ড: ৫ দিনের রিমান্ডে শ্রমিক লীগ নেতা

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৬  
আপডেট :
 ০৯ নভেম্বর ২০২০, ২১:৩৭

পাটগ্রামে হত্যাকাণ্ড: ৫ দিনের রিমান্ডে শ্রমিক লীগ নেতা

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজারে গণপিটুনি দিয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় প্রধান আসামি আবুল হোসেনকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার বিকালে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন লালমনিরহাট আমলি আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফেরদৌসী বেগম।

আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী এলাকার মৃত হাবু মিয়ার ছেলে। পেশায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। তিনি বুড়িমারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি।

শনিবার ভোররাতে আলোচিত এই আসামিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। এ নিয়ে মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর ফারুক।

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার অভিযোগে নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩১ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পাটগ্রাম থানার এসআই শাহজাহান আলী বাদী হয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের অভিযোগে বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত পৃথক মামলা করেন। বহুল আলোচিত তিনটি মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

আরও পড়ুন: সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দিলেন জুয়েলের সঙ্গী সুমন

এর আগে ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হারিয়ে ফেলেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান যোবাইয়ের সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে যান। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।

নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় কোরআর ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।

আরও পড়ুন: ‘মেরে ফেলো, ওদের মেরে ফেলো’

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে হত্যাকাণ্ড: প্রধান আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত