ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

দেশের ভ্যাকসিন কেনার বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগান কি নিশ্চিত

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২২:৫৫

দেশের ভ্যাকসিন কেনার বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগান কি নিশ্চিত
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বা টিকা কেনার জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগান এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে বাংলাদেশ অর্থসহায়তা চেয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থে দেড় হাজার কোটির টাকা নিয়ে ভ্যাকসিন কেনার দৌড়ে থাকার কথা বলা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামের অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ যে সমঝোতা করেছে, তাতেই বিপুল অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে। অন্যদিকে সংরক্ষণ এবং সরবরাহের অবকাঠামোর অভাবে ও দাম বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিন বাংলাদেশ আনতে পারছে না।

সরকারের ১৫০০ কোটি টাকা

কর্মকর্তারা যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজ বাংলাদেশের জন্য পাঁচ ডলার করে পড়তে পারে, সবচেয়ে কম দামে এই ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজের জন্য প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা গুনতে হবে। এর ফলে সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকা ভ্যাকসিন কেনার দৌড়ে যথেষ্ট নয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এমন প্রেক্ষাপটে বিপুল অঙ্কের অর্থ যোগাড়ে সরকার বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করছে বলা যায়।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বিদেশি উৎস থেকে অর্থ যোগানের চেষ্টায় ইতিবাচক সাড়া মিলছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে, যা সোয়া চার হাজার কোটি টাকার মতো। অন্যান্য সংস্থার কাছেও অর্থ সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুল মান্নান বলেছেন, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রকল্পগুলো পরিবর্তন করে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থ-সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব উৎস থেকে ১৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করেছে। এর অর্ধেক টাকা আমরা ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেয়েছি। এটা আমরা বুকিং মানি হিসাবে ব্যবস্থা করেছি। বিশ্বব্যাংকের দু'টো প্রকল্প আছে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আমাদের স্যানিটাইজার,আইসিইউ, অক্সিজেনসহ কিছু দিতে চেয়েছিল। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকেরও প্রকল্প আছে। আমরা তাদের এই প্রকল্পগুলোর রিভাইস করে ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থ দেয়ার অনুরোধ করেছি। এই প্রকল্পগুলো মিলে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা) আমাদের আছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ যা রাখা হয়েছে, তা থেকেও প্রয়োজনে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থ নেয়া হবে।

কিন্তু অর্থের যোগান নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন, ধনী দেশগুলো অক্সফোর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের দু'টি কোম্পানির ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ আগেই কিনে রেখেছে।এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। দেশি বিদেশি যে উৎস থেকেই হোক না কেন- আরও আগে অর্থ নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, দেশে মহামারি সামলাতে যে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছিল, এখন ভ্যাকসিন আনতে এবং এর অর্থ যোগাড়ে অব্যবস্থাপনা বা সমন্বয়হীনতা যেন না হয়- সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সজাগ থাকা উচিত।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই কি একমাত্র ভরসা

অন্যদিকে বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকোর সাথে যে সমঝোতা স্মারক সই করেছে, এটিই বাংলাদেশের দিক থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৯২টি নিম্ন আয়ের দেশের জন্য ভ্যাকসিন বরাদ্দের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার ওপরও বাংলাদেশ নির্ভর করছে।

সরকারের বিষেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহিদুল্লাহ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন এগিয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা আনা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।

তিনি বলেন, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিনের চ্যালেঞ্জ আছে দু'টি: প্রথমটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রেই তারা বিক্রি করবে ৩৭ ডলার করে। এর দুই ডোজের দাম অনেক বেশি পড়বে। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, মডার্নার ভ্যাকসিন মাইনাস ২০ এবং ফাইজারেরটা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশে এই তাপমাত্রায় সংরক্ষণ এবং সরবরাহের ব্যবস্থা নাই। এর ফলে এই দু'টো ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আনা চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানাও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর ভ্যাকসিন বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয়।

কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার ভাবছে না।

স্বাস্থ সচিব মো আব্দুল মান্নান বলেছেন, অক্সফোর্ডের বাইরে চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিন আনার ব্যাপারেও আলোচনা চালানো হচ্ছে। অক্সফোর্ডের সাথে যে সমঝোতা স্মারক হয়েছে, এটা কিন্তু এক ধরনের অগ্রগতি যা আমাদের হাতে আছে। রাশিয়ার টিকা পাওয়ার ব্যাপারেও তাদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরো বলেছেন, চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। যদিও তারা ট্রায়াল করতে চেয়েছিল এবং তা না করে তারা একটু ব্যাকফুটে আছে। এরপরও তাদের সাথে কথা হয়েছে। চীনের আরেকটি কোম্পানির সাথেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। নানান বিষয়ে আমরা স্টাডি করছি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত